NewsOne24

‘জঙ্গিদের যম’ এসপি বাবুলকে দুর্বল করতে স্ত্রীকে হত্যা!

স্টাফ রিপোর্টার

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ৫ জুন ২০১৬ রোববার

মাহমুদা আক্তার                  -ফাইল ফটো

মাহমুদা আক্তার -ফাইল ফটো

জঙ্গি দমনে দুর্ধর্ষ এবং দুঃসাহসী ভূমিকার কারণে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে ‘জঙ্গিদের জম’ হিসেবে। সে কারণে জঙ্গিদের কাছ থেকে নিয়মিত হুমকি পেয়ে আসছিল তার পরিবার। শেষ পর্যন্ত বাবুল আক্তারকে কিছু করতে না পারলেও তার নিরপরাধ স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ধারণা করা হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সঙ্গঠনের সদস্যরা এ কাজ করেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার সকালে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে (৪০) চট্টগ্রামে তাদের বাসার কাছে মাথায় গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, সকাল পৌনে ৭টার দিকে ওআর নিজাম রোডে (জিইসি মোড়ের কাছে) মোটরসাইকেলআরোহী হামলাকারীরা মাহমুদার মাথায় গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

হামলাকারীরা সংখ্যায় তিনজন ছিল এবং তাদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল বলে জানা গেছে।

বর্তমানে রাজধানীতে পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্বপালনরত বাবুল গত এপ্রিলে এডিসি থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদোন্নতি পান। মর্মান্তিক দুঃসংবাদটি পেয়ে তিনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন।

সর্বশেষ পদোন্নতির আগে বাবুল গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে ছিলেন।

বাবুলের পেশাগত সাফল্য ও জঙ্গি হুমকি
এক কথিত পীর ও তার খাদেম হত্যা এবং বোমায় ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার আলোচিত ঘটনা তদন্তে অসাধারণ সাফল্য দেখান বাবুল আক্তার। দুঃসাহসী আর কর্মতৎপর বাবুল আক্তার জেএমবির গোপন আস্তানায় হানা দেন। সেখান থেকে জেএমবি নেতা জাবেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। গত অক্টোবরে পুলিশের সঙ্গে এক অভিযানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন জাবেদ। একটি সূত্র জানায়, বন্দুকযুদ্ধেও দু’একজন জঙ্গি মারা যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বেশকয়েকজন জঙ্গিকে পাকড়াও করেন তিনি।

এসব ঘটনার সূত্রে বাবুল আক্তার ও তার পরিবার সাম্প্রতিক সময়ে হুমকি পেয়ে আসছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়টিতে ইঙ্গিত করে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোক্তার আহমেদ জানান, যেহেতু বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে অনেক কাজ করেছেন, তাই জঙ্গিরাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হবে।

বাবুলকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলতেই এ হত্যাকাণ্ড
জঙ্গি বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে চলা বাবুল আক্তারকে দুর্বল করতেই জঙ্গিরা একাজ করেছে মনে করেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদার। তিনি বলেন, এসপি বাবুল ও তার পরিবার হুমকি পাচ্ছিলেন অনেকদিন ধরে। তিনি এখন ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত। সে হিসেবে ঢাকার তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় তাকে টার্গেট করা কঠিন। কিন্তু যেহেতু জঙ্গিরা তার ক্ষতি করার চেষ্টায় ছিল, তাই তার নিরপরাধ স্ত্রীকে হত্যা করে তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলতেই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা।

পুলিশ জানায়, মাহমুদা তার প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে ওআর নিজাম রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে জিইসি মোড়ে যাচ্ছিলেন। এসময় মাহমুদার মাথায় গুলি করা হয়। ছয় বছর বয়সী ছেলেটি বলছে, মোটরসাইকেলে যারা এসেছিল, তারা প্রথমে তাকে একপাশে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর একজন তার মায়ের পেটে ছুরি মারে এবং পরে গুলি করে।
বাবুল-মাহমুদার চার বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে।

মাহমুদার মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল