নয়া তালেবান চিফ আখুন্দজাদা যোদ্ধা নন ‘পণ্ডিত’!
বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক
নিউজওয়ান24.কম
প্রকাশিত : ১২:৫১ পিএম, ২৬ মে ২০১৬ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৪৩ পিএম, ২ জুন ২০১৬ বৃহস্পতিবার

বেলুচিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় জ্বলছে মোল্লা মনসুরকে বহকারী গাড়ি, স্থানীয়রা সে দৃশ্য দেখছে
আফগান তালেবানের নয়া প্রধান মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা একজন পণ্ডিত ব্যক্তি, যোদ্ধা নন। একজন ধর্মীয় পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত এই শীর্ষ জঙ্গি অসংখ্য মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদানকারী তালেবান বিচারক হিসেবেও আলোচিত-সমালোচিত।
গত শনিবার পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় মোল্লা আকবর মনসুর নিহত হবার পর বুধবার আফগান তালেবানের নয়া প্রধান হিসেবে ঘোষিত হায়বাতুল্লাহ তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের একজন সিনিয়র জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাঁচ বছরের ওই তালেবানি শাসনামলে তালেবানি কায়দার অনেকগুলো রায় ঘোষণা করেছেন মোল্লা হায়বাতুল্লাহ।
বয়স পঞ্চাশের কোঠায় থাকা নয়া এই তালেবান বসও আগের দুই প্রধান মোল্লা মনসুর ও মোল্লা ওমরের মতো দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের লোক। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর ২০১৩ সালে মারা যান।
জঙ্গি গোষ্ঠীটি অন্যতম নীতিনির্ধারক হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ২০০১ সালে মার্কিন সামরিক অভিযানে তালেবান সরকারের পতনের পর জঙ্গিগোষ্ঠীটির ‘প্রধান বিচারক’ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তিনি মোল্লা মনসুরের খুব ঘনিষ্ঠ এবং তার দু’জন ডেপুটির একজন ছিলেন।
আখুন্দজাদা যুদ্ধের ময়দানে তার শৌর্যবীর্যের জন্য বিখ্যাত নন। তিনি বেছে নিয়েছেন ধর্মীয় ও আইন শিক্ষার জগৎকে। তালেবানি ধারার ইসলামকে মুসলিম সমাজ কতটা ও কীভাবে মেনে নেবে সে সংক্রান্ত অনেক তালেবানি নীতি সমূহের প্রণেতা হিসেবে ধরা হয় তাকে।
তালেবানদের বিষয়ে তত্ত্ব-তথ্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই জানান, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারির সময়টায় আখুন্দজাদা পাকিস্তানে অবস্থান করেন যে সময়টায় যুদ্ধের ময়দানে তার সাবেক দুই বস মোল্লা ওমর আর মোল্লা মনুসর মার্কিন মদদপুষ্ট মুজাহেদীন যোদ্ধা হিসেবে ব্যাপক প্রভাব ও খ্যাতি অর্জন করেন। তবে অন্য সূত্র মতে, তিনি সোভিয়েত বিরোধী লড়াইয়ে একটা সময়ে মুজাহেদীন যোদ্ধা ছিলেন।
ইউসুফজাইর মতে, নয়া তালেবান চিফ যোদ্ধা হিসেবে তেমন অভিজ্ঞ না হলেও মোল্লা মনসুরের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ধারণা করা যায়, তিনি মনসুরের মতধারায়ই তালেবানকে পরিচালনা করবেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, নীতি-নির্ধারণে তার অগ্রবর্তী মাসুদ ও মনসুরের চেয়ে তিনি উপদেষ্টা পরিষদের (মজলিসে শুরা) ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হবেন এবং তাদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই তাকে চলতে হবে।
ইসলামাবাদভিত্তিক বিশ্লেষক আমির রানার মতে, দলের ভেতরকার ব্যাপক মতভেদ আর দ্বন্দ্ব এড়াতেই আখুন্দজাদাকে তালেবান প্রধান করা হয়েছে।
জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে বয়স এবং জ্যৈষ্ঠতার বিচারে ১৯৯৪ সালে দলে যোগ দেওয়া আখুন্দজাদা হচ্ছেন দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে তার সিনিয়র হচ্ছেন তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল ঘানি বারাদার।
বেশকিছু সূত্রের মতে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক থাকা সত্ত্বেও ঘানি বারাদারকে নেতৃত্বে আনতে দলে বেশ দড়ি টানাটনি হয়। তবে শেষপর্যন্ত পাকিস্তানের মাটিতে বসা শুরা কমিটির বৈঠকে আখুন্দজাদাই আফগান তালেবান বসের ‘মর্যাদার আসনে’ অধিষ্ঠিত হন।
মার্কিন ও আফগান সরকারের মতে, মনসুর ছিলেন শান্তি প্রক্রিয়ার পথের কাঁটা। চলতি বছরের শুরুতে তিনি শান্তি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি আফগানে টানা ১৫ বছর ধরে চলমান লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়িয়ে দেন। আর এতে একের পর এক ভয়াবহ সব তালেবানি বোমা হামলা চালানোর অন্যতম পরামর্শদাতা ছিলেন তার ডেপুটি ও বর্তমান তালেবান চিফ আখুন্দজাদা। সাবেক তালেবান যোদ্ধা আকবর আগা জানান, গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন অবস্থায় যখন মোল্লা মনসুরের অনুপস্থিত থাকতেন তখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আখুন্দজাদাই নিতেন।
২০০১ সাল থেকে তালেবান গোষ্ঠী কাবুলে মার্কিন মদদপুষ্ট সরকারকে উৎখাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ওই সালেই মার্কিন সামরিক অভিযানে তালেবান সরকারের পতন হয়।
ডন.কম, ইন্ডিয়া টুডে, আলজাজিরা
নিউজওয়ান২৪.কম/একেআর