NewsOne24

কাতালান সংসদ ভেঙে দিলেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী, সংকট ঘনীভূত

নিউজ ওয়ান টুয়েন্টি ফোর ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় কাতালান সংসদ ভেঙে দিয়ে আগাম স্থানীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। ২৭ অক্টোবর শুক্রবার আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ভোটাভুটি শেষে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষিতে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের জন্য ২১ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেন।

সে সময় কাতালান প্রেসিডেন্ট নেতা কার্লেস পুজেমন ও তার মন্ত্রীসভাকে এমনকি কাতালান পুলিশপ্রধানকে বরখাস্ত করারও ঘোষণা দেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী। কাতালান সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় বলেন, ‘আমরা কখনোই চাইনি সংসদ ভেঙে দেওয়ার মতো এমন কিছু হোক।’

এদিকে কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ঘোষণা আসার পর উল্লাসে ফেটে পড়ে বার্সেলোনা। আর মাদ্রিদে স্পেনের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট কেন্দ্রের শাসন জারির নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেয়। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে স্পেন গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সাংবিধানিক আদালতের রায় উপেক্ষা করে কাতালানের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার জন্যে গণভোটের আয়োজনের পর কেন্দ্রের সাথে তাদের সংকট শুরু হয়। সাংবিধানিক আদালত এ গণভোটকে অবৈধ বলে রায় দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, স্পেনের সাংবিধানিক আদালত কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকে অবৈধ বলে রায় দেবে। কারণ, যুক্তরাজ্য, জার্মানী ও ফ্রান্স সকলে স্পেনের ঐক্যের পক্ষে।

এর আগে কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার। আর স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ বলেন, ‘কাতালান সরকার স্পেনে ফাটলের চেষ্টা করছে। কিন্তু কাতালোনিয়া স্পেনের অংশ ছিল এবং থাকবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালে গণতান্ত্রিক শাসনের শুরুতে নতুন সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে স্পেন। এই সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদে সংকটজনক পরিস্থিতি সামাল দিতে মাদ্রিদের হাতে সরাসরি শাসনভার দেওয়া হয়। তবে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটের আগে অনুচ্ছেদটি ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি আর তৈরি হয়নি।

কেন্দ্রের বাধা উপেক্ষা করে ১ অক্টোবর গণভোটের আয়োজন করা হয় কাতালোনিয়ায়। এতে ৯০ শতাংশ ভোটার কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন। স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষার পাশাপাশি পুলিশি বাধার মুখে সেদিন ৪৩ শতাংশের বেশি ভোট জমা পড়েনি।

স্পেন সরকার এই গণভোটকে বেআইনি ও অসাংবিধানিক হিসেবে অভিহিত করে গণভোটের ফলাফলকে পুঁজি করে কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দেন কার্লোস পুজদেমন। পরবর্তীতে মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিত করেন তিনি।

২১ অক্টোবর কাতালোনিয়া সরকারকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকার’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্পেন সরকার। আঞ্চলিক সরকার যাতে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্পেনের মন্ত্রিসভা ওই সরকার বাতিলের পক্ষে মত দেয়।

তখন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নের আঞ্চলিক নেতা কার্লোস পুজেমন একপক্ষীয় এবং আইনবহির্ভূতভাবে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন। এর পাশাপাশি ওই অঞ্চলে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়।

২৭ অক্টোবর শুক্রবার কাতালান পার্লামেন্টের ১৩৫ সদস্যের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেন ৭০ জন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ১০টি। আর দুইজন খালি ব্যালট জমা দেন। পার্লামেন্টে ভোটাভুটি শেষে স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয় কাতালোনিয়া।

উল্লেখ্য, স্পেনের বিত্তশালী অঞ্চল কাতালোনিয়া। জনসংখ্যা ৭৫ লাখ যা স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ। এর রাজধানী বার্সেলোনা। অঞ্চলটির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ২৫.৬ শতাংশ এবং মোট বিদেশি বিনিয়োগের ২০.৭ শতাংশ আসে কাতালুনিয়া থেকে। আর স্পেনের জিডিপির ১৯ শতাংশের যোগান দেয় কাতালুনিয়া।

গৃহযুদ্ধের আগে কাতালোনিয়া আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন পেলেও ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর স্বৈরশাসনের সময় তা নানাভাবে খর্ব করা হয়। ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর কাতালান জাতীয়তাবাদ ফের শক্তিশালী হতে শুরু করে, আন্দোলনের মুখে ১৯৭৮ সালে তাদের স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

স্পেনের পার্লামেন্ট ২০০৬ সালে নতুন আইন করে কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকারের হাতে আরও কিছু ক্ষমতা দেয়। কাতালানদের দেওয়া হয় জাতির মর্যাদা। কিন্তু পরে স্পেনের সাংবিধানিক আদালতে সেসব বাতিল হয়ে যায়। তবে ২০১৫ সালে কাতালোনিয়ার প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান সেখানকার স্বাধীনতাকামীরা।

নির্বাচনের ওই ফলের মধ্য দিয়ে স্পেন থেকে পৃথক হয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পথে কাতালুনিয়া এগিয়ে যায়।