NewsOne24

আন্দামান সাগরে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাতে চায় ভারত

ডেস্ক রির্পোট

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:০৫ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আন্দামান সাগর ভাসতে থাকা একটি নৌকা থেকে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যে ৮১ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীকে উদ্ধার করেছেন; তাদেরকে ফেরত নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি। 

আজ (শুক্রবার) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটির বিকল ইঞ্জিন মেরামত করছে; যাতে তারা বাংলাদেশে নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন।

রয়টার্স বলছে, রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌযানটির নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছে ভারত সরকার। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর আশায় দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করা রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি আন্দামান সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভাসতে ছিল।

প্রায় চারদিন ভাসমান থাকার পর শুক্রবার ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী নৌকাটি উদ্ধারের তথ্য জানায়। নৌকা থেকে ৮টি মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। এই নৌকাটিতে ৫৬ জন নারী, ৮ শিশু, ২১ জন পুরুষ এবং পাঁচ কিশোর ছিল। বর্তমানে তাদের অনেকেই অসুস্থ। 

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের অনেকেই চরম পানি শূন্যতায় ভুগছেন এবং নৌকাটি চারদিন সাগরে ভাসতে থাকায় তাদের খাবার ও পানি ফুরিয়ে যায়।

নয়াদিল্লি থেকে সাগরে তল্লাশি ও উদ্ধার তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি সপ্তাহের আগে নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায় এবং কিছু রোহিঙ্গা ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে উদ্ধারের আকুতি জানান।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, এটি এক ধরনের মানবিক সংকট। আমরা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।

‌উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে ভারত নৌকাটির ইঞ্জিন মেরামত অথবা নতুন একটি ইঞ্জিন সরবরাহ করবে।

সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার রোহিঙ্গাদের খাবার ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নারী ও শিশুদের নতুন কাপড় দিয়েছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। তবে যারা মারা গেছেন তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। 

রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটি সাগরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর গত সপ্তাহে উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

গত সোমবার ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্যাথেরিন স্টাবারফিল্ড বলেছিলেন, কয়েকদিন আগেই পাচারকারীরা নৌকাটি থেকে পালিয়েছিল বলে আমরা বুঝতে পেরেছি। নৌকাটিতে প্রশিক্ষিত চালক না থাকায় শরণার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়।

গত কয়েক বছরে পাচারকারীদের এ ধরনের বেশ কিছু প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। পাচারকারীরা প্রায়ই উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের অর্থের বিনিময়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনা করে। সশস্ত্র একটি গোষ্ঠী মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানোর পর সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।