NewsOne24

করোনার ওষুধ তৈরিতে বাংলাদেশের সাফল্য 

নিউজ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১০:০৩ পিএম, ১০ মে ২০২০ রোববার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত


প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কার্যকর একটি ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের সাফল্য অর্জন করছে। আর এই সাফল্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরো ধাপ এগিয়ে গেল।

ওষুধটি বাংলাদেশে প্রথম সারির ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠান এসকেএফ প্রথম উৎপাদন করল।

শিকাগোর গবেষণাগারে সফল পরীক্ষার পর মাত্র গত সপ্তাহে আমেরিকার ওষুধ প্রশাসন এফডিএ ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। জাপানের ওষুধ প্রশাসনও এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। আমাদের ওষুধ প্রশাসন দেশের বেশ কয়েকটি ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠানকে এই ওষুধ দেশে উৎপাদনের অনুমতি দেয়। এদের মধ্যে এসকেএফই প্রথম, যারা জেনেরিক (মূল বা গোত্র) রেমডেসিভির উৎপাদন করল। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও উৎপাদন করতে যাচ্ছে।

এসকেএফ এখন প্রস্তুত। অনুমতি পেলেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করতে পারবে। প্রয়োজনে সামনের সপ্তাহ থেকেই প্রয়োজনীয় সরবরাহ সম্ভব। ওষুধটি সংকটাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

করোনা মহামারি রোধে অন্তত তিনটি শর্ত দরকার। এর অন্যতম একটি শর্ত হলো চিকিৎসার সুব্যবস্থা, বিশেষভাবে হাতের কাছে ওষুধ। শর্তটি এখন পূরণ হতে চলেছে। এত দিন চিকিৎসা বলতে ছিল প্যারাসিটামল ও সাধারণত ব্যবহার করা হয়, এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক। আর ছিল শ্বাসকষ্টের প্রতিকারে ভেন্টিলেশন ও আইসিইউয়ের ব্যবস্থা। দেশে এর সুযোগ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এখন একটি বিশ্বস্বীকৃত ওষুধ আমাদের দেশেই উৎপাদিত হবে। এটা করোনা রোগীর চিকিৎসায় একটি বড় অগ্রগতি।

বিশ্বের কয়েকটি দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনার আরো বেশ কিছু ধরনের ওষুধ বানাচ্ছে। ওসব ওষুধের কার্যকারিতা বিশ্বমানে স্বীকৃত হলে এর সব কটিই দেশে তৈরি করবে বলে এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন জানিয়েছেন। এই সক্ষমতা আমাদের দেশে করোনাভাইরাস রোগটিকে পরাজিত করার একটি ভালো সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আমরা লক্ষ করেছি, করোনা রোগের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এতে আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা খুব বেশি না। মৃত্যুহারও দেড়–দুই শতাংশ। সুতরাং এই ৫–১০ শতাংশ সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ যদি আমাদের হাতের নাগালে থাকে, তাহলে আমরা মোটামুটি করোনার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাব, কিছুটা স্বস্তিতে থাকব।

এখানেই করোনার কার্যকর ওষুধ হাতের নাগালে পাওয়ার মূল তাৎপর্য। আমরা চাই করোনার বিশ্বমানে স্বীকৃত কার্যকর সব ওষুধই যেন দেশে পাওয়া যায় এবং অসচ্ছল রোগীরা যেন সুলভে ওষুধ পায়, সে ব্যবস্থা করা। তাহলে আমরা সহজে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।

করোনা টিকা

আমরা শুরুতে করোনা নিয়ন্ত্রণে তিনটি শর্তের কথা বলেছি। প্রথম শর্ত তো ওষুধ, যা আমাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাবে। কিন্তু আবার কিছুদিন পরপর যে এই রোগ ঘুরে ঘুরে আসবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? বরং গবেষকেরা বলছেন, অন্তত বেশ কয়েক বছর ঘুরেফিরে রোগটি আসবেই। এটা বন্ধের একমাত্র ওষুধ টিকা। সম্প্রতি ইতালি দাবি করেছে যে তারা কার্যকর টিকা আবিষ্কার করে প্রয়োগ শুরু করেছে। তবে এটা বিশ্ববিজ্ঞানীদের স্বীকৃত কি না, তা দেখতে হবে।

গত সপ্তাহে আমরা অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সাফল্যের কথা জেনেছি। এটা আর কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর সফল হলে করোনা নিয়ন্ত্রণের আসল ব্যবস্থাটি আমরা পাব। তখন যত দ্রুত সম্ভব সব দেশে বিশ্বস্বীকৃত কার্যকর টিকা সহজলভ্য করতে হবে। সাধারণত কোনো এলাকা বা দেশের জনগোষ্ঠীর ৬০–৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে পারলে রোগটি আর সহজে ছড়াতে পারে না। ৮০ শতাংশ মানুষের টিকা সম্পন্ন হলে ভাইরাসটি নির্মূল হয়ে যায়।

করোনাভাইরাস নির্মূলের এই অন্যতম শর্তও আমাদের হাতের মুঠোয় শিগগিরই চলে আসবে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। তবে সেই অবস্থায় যেতে আরো দেড়–দুই বছর লাগবে।

সতর্কতা

এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের কি তাহলে আগামী দেড়–দুই বছর লকডাউনে থাকতে হবে? না, তা নয়। পর্যায়ক্রমে লকডাউন থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। এখন সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এটাই হচ্ছে তৃতীয় শর্ত। তবে এই শর্ত মেনে চলার জন্য আমাদের ধৈর্য লাগবে। মনে রাখতে হবে, আগামী দেড়–দুই বছর আমাদের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। মুখে অন্তত কাপড়ের মাস্ক লাগবে। ছোঁয়াছুঁয়ি চলবে না। যথাসম্ভব ঘরে থাকতে হবে। খুব জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে, সেটা পেশাগত কাজ বা বাজার–সওদার জন্যই হোক, ফিরে এসে ঘরে ঢোকার আগে জুতা–স্যান্ডেল খুলে দরজার বাইরে রেখে যেতে হবে। প্রথমেই বাইরে ব্যবহৃত কাপড়, মাস্ক একটি বালতিতে ভিজিয়ে সাবান দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গোসল করে নিলেই সবচেয়ে ভালো। দিনে কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই সব স্বাস্থ্যবার্তা এখন নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে। ওগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। তাহলে করোনা সংক্রমণ অনেক কমে যাবে, সেই সঙ্গে সংকটাপন্ন রোগী ও মৃত্যুহারও কমবে।