NewsOne24

ভিপি নুরের ওপর হামলা: মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মামুন-তূর্য গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ০৮:০৪ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। 

গতকাল (রবিবার) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। এসময় তােদর সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই হামলায় নুরসহ ৩৪ জন আহত হন। এ ঘটনায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অসেন্তাষ প্রকাশ করেছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীেদর বয়ানে জানা গেছে, ঘটনার সময়ে ডাকসু ভবনের মূল ফটক বন্ধ করে নুরের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করা হয়। এছাড়া বাইরে থেকেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোঁড়ে। 

ভিপি নুরসহ আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ফারাবীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরবর্তীেত অবস্থার উন্নিত ঘটলে আজ (সোমবার) তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। এছাড়া আহত বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

রবিবার হামলার ঘটনার পর সন্ধ্যায় আহত নুরকে দেখতে ঢামেক হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নানক ও নাছিম। এসময় হাসপাতালে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। আওয়ামী লীগের সিনিয়র দুই নেতাকে সামনে পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়া শুরু করে অনেকে। এসময় নানক ও নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে যারা স্লোগান দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে তারা কী উদ্দেশে এগুলো করছে, তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। এছাড়া নুরদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও ঘোষণা করেন তারা।

এদিকে, আজ (সোমবার) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ডাকসু হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাকসুতে যে হামলা হয়েছে তা নিন্দনীয়। হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত হোক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের পক্ষ থেকে এ হামলায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এর আগে, ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএবি) বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ভারতীয়দের প্রতি সংহতি জানাতে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে নুর ও তার সহযোগীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশে হামলা হয়। এই হামলায়ও আল মামুন এবং তূর্যরা নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ  দুই ভাগে বিভক্ত। সংগঠনটি নিবন্ধিত নয়। বিগত ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সংগঠনটির সূত্রপাত। কোটা বিরোধী আন্দোলনের ফলে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি হলে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ব্যানারে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের মধ্যেই তারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। ঢাবি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনকে সংগঠনটির আহ্বায়ক এবং সাবেক সড়ক ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে সদস্যসচিব করা হয়। এরপর চলতি বছর মার্চে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদবঞ্চিত নেতা আমিনুল ইসলামকে সভাপতি ও আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে মুক্তযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গঠন করেন জামাল উদ্দিন। একপর্যায়ে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমিনুল ইসলাম ও আল আমিনকে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেন জামাল উদ্দিন।

এর জবাবে জামাল উদ্দিন ও আসিফ ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র কেউ নন বলে দাবি করে বক্তব্য দেন আমিনুল ও আল মামুন এবং নিজেদের প্রকৃত ‘সংগঠন’ বলে দাবি করতে থাকেন। গতকাল রবিবার ঢাবি ক্যাম্পাসে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র ব্যানারে যে মিছিল শেষে ভিপি নুরুলসহ অন্যদের ওপর হামলা চালানো হয় সেই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন আমিনুল ইসলাম ও আল মামুনের সমর্থক অংশটি। এই অংশটিকে দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারানো গোলাম রাব্বানী মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, তিনি এ ধরনের কোনো সংগঠনের সঙ্গে নেই। ডাকসুর নির্বাচিত জিএস তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে একটি অংশ অনেক দিন ধরেই অপপ্রচার চালাচ্ছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে