NewsOne24

ফাঁসির মঞ্চ নেই ফেনীতে: কুমিল্লা-চট্টগ্রাম জেলে যাবে রাফির খুনিরা

নিউজ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:২৬ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

প্রতীকি চিত্র

প্রতীকি চিত্র

ফেনী জেলা কারাগারে পৃথক কনডেম সেল ও ফাঁসির মঞ্চ না থাকায় সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

তাদের কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর অনুমতি দেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা। গতকাল সোমবার (১১ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেনী জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রফিকুল কাদের জানান, মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১৬ আসামির মধ্যে পুরুষ ১৪ জনকে কুমিল্লা ও দুই নারীকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে। এদের মধ্যে ১৩ জনকে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।

সিনিয়র জেল সুপার কাদের আরো জানান, আগামী বুধবার (১৩ নভেম্বর) মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলার মামলার দিন ধার্য আছে। আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে ওই দিনই কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরৎ পাঠানো হবে। একই সঙ্গে একই দিন দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা ওরফে পপিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।

রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হচ্ছে- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। এছাড়া তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

এদিকে, ফেনীর সিনিয়র জেল সুপার জানান, যেসব আসামির দীর্ঘমেয়াদি শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড হয় সেসব আসামিকে জেলা কারাগারে না রেখে নিরাপত্তাজনিত কারণে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর জন্য কারাবিধিতে নির্দেশনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে জনবল ও কনডেম সেলের পর্যাপ্ত থাকে। তাদের পরিচালনার জন্য যা যা প্রয়োজন সব রয়েছে সেসব জেলে। ফেনী জেলা কারাগারে ফাঁসির কোনো মঞ্চ নেই, কেন্দ্রীয় জেলগুলোতে সব রয়েছে। যদি তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়, সেখানেই হবে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল একই মাদরাসা কেন্দ্রে অবস্থিত সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে লম্পট অধ্যক্ষ সিরাজের সহযোগীরা নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দেয়। এতে সে রাজি না হলে তাকে হাত-পা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সিরাজের অনুসারীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এর আগে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলা করেন। পরে নুসরাতের মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

এরপর পুলিশ ও পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় নূর হোসেন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ও আরিফুল ইসলামের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়।

একপর্যায়ে ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। আদালত ১০ জুন মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দেন ৮৭ জন।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে