NewsOne24

ভক্তরা তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলো- মাইকে ফুঁ কবিরাজের!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ০৫:০০ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৯ রোববার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সামনে সমবেত বিভিন্ন বয়সের কয়েক শ নারী-পুরুষ। অধীর আগ্রহে তাদের অপেক্ষা বিশেষ মুহূর্তের জন্য। সবার হাতেই রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল- কোনোটায় পানি, কোনোটায় তেল ভরা। সবার অপেক্ষা একজন কবিরাজের জন্য। লম্বা সময় অপেক্ষার পর সবুজ মিয়া নামের এলেন। অপেক্ষমানদের অপেক্ষার প্রহরে যবনিকা টেনে অবশেষে মাইকে ফুঁ দিলেন কাঠুরিয়া মহাশয়। তবে ভক্তদের কাছে তিনিকাঠুরিয়া নন-তিনি একজন এলমদার কবিরাজ।

তার ফুঁ-দেওযয়া পানি বা তেলে অনেক তেলেসমাতি কাজ হয়- সেরে যায় রোগ, এমন বিশ্বাস সরল বিশ্বাসীদের।

গতকাল শনিবার (০৯ নভেম্বর) কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের একটি মাঠে মাইকের মাদ্যমে গণ ফুঁৎকার দেওয়ার এ ঘটনা দৃশ্যমান হয়। একজন একজন কে ফুঁ দিলে লম্বা সযময় লেগে যাবে, তাই গণ ফুঁ-এর ব্যবস্থা। যদিও যার যার পানি বা তেলে সেই গণহারে দেওয়া ফুঁ'র জন্য  সেখানে ভোর থেকেই জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, যুবা-বৃদ্ধ।

স্থানীয় এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাধঅরণের মতে, সকাল ৮টার আগেই প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে ওই বিশাল মাঠ। যদিও অনেকেই এই সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন। তবে লোকের সমাবেশ হয়েছে বিশাল- এটা অনস্বীকার্য। ওদিকে কাঠুরিয়া-কবিরাজ সবুজ মিয়ার জন্য মাঠে মঞ্চও তৈরি করা হয়।

স্থানীয় অনেকের বিশ্বাস, কবিরাজ সবুজ মিয়ার ঝাড়ফুঁকের পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এসবের ব্যবহারে মনোবাসনাও নাকি পূরণ হয়- এমন অন্ধ বিশ্বাস থেকে সেখানে উপস্থিত হন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। শনিবার ভক্তদের ধীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বেলা ১১টার দিকে মাঠে কবিরাজের আগমন বার্তা ঘোষণা দেয়া হয় মাইকে। কবিরাজ একা আসেননি, সঙ্গে নিয়ে এসেছেন রাজনীতিও মানে রাজনীতিক। তার সঙ্গে এসেছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও সুখিয়া ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু। জনসমাবেশ যেখানে সেখানেই থাকে জনসমর্থন আর ভোটের হিসেবে-নিকেশ। তাই সেখানে তাদের আগমনটাও লাভ-ক্ষতির হিসেব মন্দ না।

ওদিকে, মঞ্চে উঠে কাঠুরিয়া-কবিরাজ উপস্থিত জনতাকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কিছুক্ষণ পর সমাগত নারী-পুরুষদের উদ্দেশে বক্তব্যও রাখেন তিনি।

এসময় তিনি বলেন, ‘আমি মাইকে ফুঁ দেব। মাইকে আমার ফুঁয়ের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতল কাজ করবে। কেউ ধৈর্য হারাবেন না।’ ঠিক যেন মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সির ব্যাপার।

কবিরাজের এই ঘোষণার পর চারপাশে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষ তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলেন যে যতটা পারেন। নিজের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। বোতলে ফুঁয়ের ছোঁয়া নিয়ে খোশদিলে রোগবালাই দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরলেন সবাই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সবুজ মিয়া নামের ওই কবিরাজের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউপির পায়লাবের গ্রামে। তিনি বনে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। সপ্তাহে চারদিন কাঠ কাটেন এবং তিনদিন কবিরাজি করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজ উপস্থিত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এখানে এসেছি আমি।

একই প্রসঙ্গে পাকুন্দিয়া থানার ওসি মফিজুর রহমান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দ্রুততম সময়ে এ আয়োজন শেষ করা হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি।

তেল-পানিপড়ার এমন আয়োজন প্রসঙ্গে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়ার সাবেক ইমাম কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গবেষক মুফতি মাওলানা এ কে এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‌এভাবে মাইকে ফুঁ দেয়া প্রতারণা ও শিরকের শামিল।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে