NewsOne24

নুসরাত হত্যা: অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামির সবার মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:৫৪ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

(বামে) সাঙ্গপাঙ্গসহ ঘাতক মূল আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ ও (ডানে) নূসরাত জাহান রাফি     -ফাইল ফটো

(বামে) সাঙ্গপাঙ্গসহ ঘাতক মূল আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ ও (ডানে) নূসরাত জাহান রাফি -ফাইল ফটো

নিজ প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদকারী ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

প্রতিবাদী রাফিকে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে হাত পা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পোষা ঘাতক দল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় রাফি। গা শিউড়ানো এ হত্যাকাণ্ডের সাত মাসের মাথায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ আজ (বৃহস্পতিবার) এ রায় দেন।

রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাফির পরিবার ও আইনজীবীসহ দেশবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

মামলার চার্জশিটভুক্ত ও দণ্ডিত ১৬ আসামি হচ্ছে সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, একই কলেজের প্রভাষক আফছার উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, হাফেজ আবদুল কাদের, একই মাদ্রাসা ছাত্র নুর উদ্দিন, ইফতেখার উদ্দিন রানা, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, শামীম, সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, আবদুর রহিম শরীফ, মহিউদ্দিন শাকিল, ইমরান হোসেন মামুন, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন্নাহার মনি, শাহাদাত হোসেন শামীম।

প্রধান আসামি বরখাস্ত অধ্যক্ষ সিরাজসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ১৬

ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচারক মামুনুর রশিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের যুক্তিখণ্ডন শেষে ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রায় ঘোষণার দিন হিসেবে নির্ধারণ করেন। 
২৭ মার্চ সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ অফিস রুমে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। একই দিন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে। আসামিরা নূসরাত ও তার পরিবারকে নানাভাবে অভিযোগ প্রত্যাহারে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তাতে নত হয়নি প্রতিবাদী নুসরাত। পরবর্তীতে ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা চলাকালীন কৌশলে নুসরাতকে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় তার-ই সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল বোরকা পরা আরও চারজন। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ফের নুসরাতকে হুমকি-ধামকি দেয়, চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু নুসরাত কিছুতেই রাজি না হওয়ায় তারা এক পর্যায়ে তার হাত পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাকে উদ্ধার করে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। আগুনে নুসরাতের শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। নুসরাতের মৃত্যুর পর তার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ফেনীসহ সারা দেশ ফুঁসে ওঠে, শুরু হয় জেলায় জেলায় বিক্ষোভ আর প্রতিবাদ। নুসরাতের মৃত্যুর দুদিন আগে (৮ এপ্রিল) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে