NewsOne24

এমন পাগল ‘ইউএনও’ আরও হয় না কেন বাংলাদেশে? 

নিউজ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:০০ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার

এসি পৌঁছে গেছে হাসপাতালে

এসি পৌঁছে গেছে হাসপাতালে

নিজেকে অপরাধী মনে করেছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইকবাল হোসেন। এই অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হতে তিনি ত্বরিৎ একটি ব্যবস্থা নিয়েছেন- যা অন্তত আজকালকার বাস্তবতায় খুবই দুর্লভ বলতেই হয়। ইকবাল ঘোষণা দিলেন, তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য এসির ব্যবস্থা না করে নিজের রুমের এসি ব্যবহার করবেন না। কেন এমন সিদ্ধান্ত? আসুন জেনে নেয়া যাক তার বয়ানেই।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও ইকবাল তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। এই রুমের মধ্যে থাকতে ভালো লাগছে না। হাসপাতালে অপারেশনের রোগী গরমের সঙ্গে লড়ছে। রাতের তালা আমাকে বদলে দাও। কাল থেকে আমার এসি রুম বন্ধ থাকবে। রোগীদের এসির ব্যবস্থা না করে এই এসি রুম ব্যবহার করব না। দয়া করে রুমে ঢুকে কেউ এসি চালাতে বলবেন না। হাসপাতালে এসির ব্যবস্থা হবে। কোনো ময়লা থাকবে না। জুতা বাইরে থাকবে। আর বাথরুম থেকে গন্ধ নয়, ঘ্রাণ আসবে।’

এরপর যেই কথা সেই কাজ। এবং শেষতক তালা হাসপাতালের রোগীদের এই গরমে কিছুটা স্বস্তির পরশ দিতে এসির ব্যবস্থা করেছেন ইকবাল হোসেন। গতকাল রবিবার বিকেলে এসিগুলো তালা হাসপাতালে এসে পৌঁছায়। আজ সোমবার সকাল থেকেই এসিগুলো হাসপাতালে লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু বলেন, প্রাথমিকভাবে দুটি ওয়ার্ডে ১২টি এসির জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। আরেকটি ওয়ার্ডে পরবর্তীতে লাগানো হবে। এর মধ্যে চারটি এসি রবার বিকেলে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে। সোমবার বাকিগুলোও চলে আসবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এগুলো পাঠিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন ও আমার উদ্যোগে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ডা. মীর আরও জানান, ওয়ার্ডের থাইগ্লাস লাগানো ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই এসিগুলো লাগানোর কাজ শুরু হবে।

হাসপাতালে এসি লাগানোর পটভূমি বিষয়ে তালা ইউএনও ইকবাল বলেন, আমার দুই সন্তান। একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। আমি ও আমার পরিবার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। আমার সন্তানকে তালা হাসপাতালে নিয়ে যাই চিকিৎসার জন্য। সেখানে চিকিৎসক আন্তরিক হয়ে চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু পরিবেশটা আমার ভালো মনে হয়নি। এরপর আমি দোতলায় ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি, ডেঙ্গুর ভয়ে মা-বোনেরা প্রচণ্ড গরমেও মশারির মধ্যে রয়েছেন। তাদের ঘামে চারপাশ দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। বাথরুম নোংরা। হাসপাতালের জনবল কম, তাদেরও কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের ব্যবস্থা চালু করেছেন। যা অনেক উপজেলাতে হয় না। এরপর আমার মনে হয়েছে হাসপাতালের রোগীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য এসির ব্যবস্থা করা যায় কিনা। উদ্যোগ গ্রহণ করি আর সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অনেকেই ভেবেছিল এটা কথার কথা বলেছি, কিন্তু আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। 

ইউএনও বলেন, তালা হাসপাতালকে আমি একটি মডেল হাসপাতাল করতে চাই। যাতে সাধারণ মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিকে না গিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ইউএনও ইকবাল আরও বলেন, হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে টিভির ব্যবস্থা করা ও বাইরে একটি ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থা করা হবে। রোগী বা রোগীর স্বজনরা পরিবেশ দেখে নিজেই জুতা বাইরে রেখে প্রবেশ করবেন। বাথরুমগুলো থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। হাসপাতালের মধ্যে ফুলের টব দেয়া হবে। এককথায় এটা হবে আধুনিক হাসপাতাল। সবার সহযোগিতায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চাই। পরবর্তীতে সরকার যদি কখনো এটাকে মডেল হিসেবে নেয়, তবে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে এই মডেল। উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। প্রাইভেট ক্লিনিক ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হবে রোগীরা।

সাতক্ষীরার বিশিষ্ট সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল এ প্রসঙ্গে জানালেন, সরকারি টাকায় নয়, নিজস্ব উদ্যোগে, ডা. মীর আবুর সহযোগিতায় এই জনহিতকর কাজটি করেছেন।   

এদিকে, ইউএনও ইকবালের এই কাজ উপজেলাবাসীকে আনন্দিত করেছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এ ধরনের কাজ যারা কারে তাদেরকে হয়তো অনেকেই ‘পাগল’ বলবেন। আবার এই বাংলাদেশেই মানুষজন খুব প্রিয় আদরের মানুষকে ‘পাগল’ বলে ডাকেন। ইউএনও ইকবাল হয়তো সেই পাগলদেরই একজন। বাংলাদেশে আজে এরকম অনেক পাগলের দরকার আছে।

গত ২৯ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা থেকে তালা উপজেলায় যোগ দেন ইকবাল হোসেন। যোগদানের পরই তিনি তালা সদরসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে নাগরিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও অবৈধ পার্কিংরোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানা উদ্যোগ শুরু করেন।
নিউজওয়ান২৪.কম/এসএস