ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ডিএনএতেই লুকিয়ে জঙ্গিবাদের বীজ! 

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৬ জুলাই ২০১৯  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মানুষের বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে তার ডিএনএ। পূর্ণরূপ ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। মানুষ যে বংশ পরম্পরায় নিজেদের পূর্বসূরিদের স্বভাব চরিত্র পেয়ে থাকে, তার কারণ হলো তাদের ক্রোমোজোমে লুকিয়ে থাকা এই অণু। 

অন্যদিকে, বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম বড় একটি দুশ্চিন্তার নাম জঙ্গিবাদ। শান্ত, সুন্দর পৃথিবীতে নৈরাজ্য ছড়িয়ে দিতে কিছু বিপথগামী মানুষ পা বাড়াচ্ছে জঙ্গিবাদের দিকে।

আরো পড়ুন>>> ইহুদি অধ্যুষিত ইসরায়েলের জন্ম যেভাবে

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, একজন মানুষের জঙ্গি হয়ে ওঠার পেছনে কি ডিএনএর ভূমিকা থাকতে পারে কেন সমাজের গুটিকয়েক মানুষ পথভ্রষ্ট বা ব্রেইনওয়াশড হয়ে এ ধ্বংসের পথে পা বাড়ায় 

আগেই বলেছি, ডিএনএ মানুষের বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে। অর্থাৎ একজন মানুষের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে তার যাবতীয় তথ্যের একটি কপি থাকে ডিএনএতে। ঠিক যেমন আমরা পেনড্রাইভ ব্যবহার করি। পেনড্রাইভে আমরা যেমন অনেক ফাইল বহন করতে পারি, ঠিক তেমনি ডিএনএও আমাদের বংশগতীয় তথ্য বহন করে। এখন মনে করুন, একটি পেনড্রাইভ আপনি কম্পিউটারের সঙ্গে কানেক্ট করার পরপরই কি সেটিতে থাকা ফাইলগুলো ওপেন হয়ে যায় অবশ্যই তা নয়! 

পেনড্রাইভে থাকা একটি ফাইল চালু করতে হলে সেই ফাইলের ওপরে ক্লিক করে আপনার নিজেকে ফাইলটি ওপেন করতে হবে। তাকে যদি ওপেন সিগনালটি না দেয়া হয়, তবে ফাইলে থাকা তথ্য কোনোমতেই আপনার সামনে প্রকাশিত হবে না। তাই বলা যায়, পেনড্রাইভকে আদেশ না দেয়া পর্যন্ত সে তার ভেতরে থাকা ফাইলগুলো ওপেন করতে পারবে না। 

ঠিক একই রকমভাবে ডিএনএ হলো আমাদের সব বৈশিষ্ট্য বহনকারী একটি পেনড্রাইভ। কিন্তু ওপেন সিগনালটি না পেলে সে তাতে থাকা কোনো বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ করতে পারবে না। তো এখান থেকে আমরা কি বুঝতে পারলাম ডিএনএর বহনকৃত বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হওয়ার জন্য পারিপার্শ্বিক সিগনাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, যেসব শিশু ছোটবেলায় পারিপার্শ্বিক নানা কারণে সদা উদ্বিগ্ন ও ভীত থাকে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে বিভিন্ন উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। শিশুদের শান্ত থাকাটা নির্ভর করে ডিএনএর জিআর নামক এক ধরণের জিনের ওপরে। এই জিনটি ওপেন হয়ে গেলে শিশুরা শান্ত থাকে। কিন্তু যদি এই জিনটি কোনো কারণে ওপেন না হয় তবে তারা দুশ্চিন্তা ও ভয়ের মধ্যে সময় কাটাতে থাকে। এই একাকী ও উদ্বিগ্ন শিশুদের পরবর্তীতে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

এখন অনেক বাবা-মাই হয়তো চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করবেন, এই জিআর জিন ওপেন করা যায় কীভাবে জিআর জিনটি ওপেন করার পদ্ধতি বিজ্ঞানীরা বিখ্যাত নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। জানলে অবাক হবে, ইঁদুরের সঙ্গে মানুষের ডিএনএর প্রায় ৯৫ শতাংশ মিল রয়েছে।

তো, পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রথমে দুই দল ইঁদুর নেয়া হলো। প্রথম দলকে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে দেয়া হলো। অন্য দলকে রাখা হলো তাদের মায়ের কাছেই। মা ইঁদুর তার জিভ দিয়ে বাচ্চাদের চেটে প্রতিনিয়ত আদর করত। মায়ের আদর পেয়ে এই দলটি বেড়ে উঠতে লাগল। অন্য দলটি বড় হতে লাগল মায়ের কোনো স্নেহ ছাড়া। ফলাফলটা ছিল বিষ্ময়কর। 

বড় হওয়ার পর দুই দল ইঁদুরের ডিএনএর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে পাওয়া গেল, মায়ের স্নেহ পেয়ে বড় হওয়া ইঁদুরদের দেহে জিআর জিনটি ওপেন অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে একাকী বেড়ে হওয়া ইঁদুরগুলোর ডিএনএতে জিআর জিন অফ অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ, বাবা-মা ও পরিবারের আদর স্নেহই একটি শিশুর ডিএনএতে জিআর জিনটি সক্রিয় করতে পারে। 

পরিবারে বাবা-মার মধ্যে কলহ, সন্তানের প্রতি অবহেলা এইসব চলতে থাকলে সেই সন্তান বেড়ে উঠবে এক ভীতিকর, উদ্বিগ্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। মনের বিকাশ সঠিকভাবে না হওয়ায় বড় হয়ে তার বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অত্যাধিক। কুপথগামী হয়ে পরিবারের ভালোবাসা না পাওয়া সন্তানটি বড় হয়ে হাঁটতে পারে জঙ্গিবাদের অন্ধকার পথে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড