ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ওয়াসা এমডি তাকসিমের জন্য জুরাইন থেকে এলো ‘শরবত-এ-কালাপানি’

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৯  

হাজির শরবত-এ-কালাপানি, আজ বেলা ১১টায় ওয়াসা ভবনের সামনের দৃশ্য

হাজির শরবত-এ-কালাপানি, আজ বেলা ১১টায় ওয়াসা ভবনের সামনের দৃশ্য

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীতে ওয়াসা ভবনের ঠিক বিপরীতে সাধারণ একজন নাগরিক মিজানুর রহমানের অভিবাবকত্বে অবস্থান নিয়েছিলেন জুরাইন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের হাতে পানির জগ-গ্লাস এবং প্ল্যাকার্ড দেখে লোকজন উৎসুক হতে শুরু করে। একপর্যয়ে তাদের ঘিরে এক ধরনের জটলা তৈরি হয়ে যায়। এমন হওয়ার-ই তো কথা। কারণ তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডের লেখা পড়ে যে কেউ দাঁড়াতে চাইবে। প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল- পানি দাও ময়লা না; দূষিত পানির দায় নিতে হবে; দূষিত পানির ওয়াসা প্রভৃতি। এসব দেখে আসেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। পুলিশকেও এসময় সেখানে তৎপর দেখা যায় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায়। 

কাছে গিয়ে দেখা গেল মিজানুর রহমান তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে বোতলভর্তি পানি বের করে কাঁচের জগে ঢালছেন। এগুলো জুরাইন এলাকার পানি বলে জানালেন তিনি। আরো জানালেন, এই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে ওয়াসার এমডিকে খাওতে চান তিনি।

কারণ, গত ২০ এপ্রিল ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান চ্যালেঞ্জ জানয়েছিলেন যে তার অধীনস্থ ওয়অসার পানি ১০০% সুপেয়। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরবরাহকারী পাইপলাইন দিয়ে বাড়িরর রিজার্ভ ট্যাংকিতে ঢোকা পর্যন্ত ওয়াসার পানি পানের জন্য নিরাপদ। তার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান অনেকেই। তাদের মধ্যে জুরাইনবাসী মিজানুর রহমান এবং তার সঙ্গীদের প্রতিবাদটি রূপ নিয়েছে একেবারে হাতে কলমে পরীক্ষা দেওয়ার মতো। এরই অংশ হিসেবে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে আসেন তিনি ওয়াসার করা পানির শরবত বানিয়ে তার এমডিকে খাওয়ানোর কর্মসূচি নিয়ে।

তিনি বলেন, আমরা যারা একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে যাই, তাদের অনেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কর্মসূচি দিয়েছি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমরা ওয়াসা ভবনে গিয়ে এমডির জন্য ওয়াসার বিভিন্ন কলের পানি নিয়ে এসেছি। যদি তার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে শুধু লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করে খাওয়াবো। তিনি খেয়ে বলবেন, পানি কতটুকু সুপেয়।’

মূল কথা ওয়াসার ‘কালা-পানির’ (ময়লা পানি) শরবত অর্থাৎ শরবত-এ-কালাপানি খাওয়াতে চান তারা খোদ ওয়াসার এমডিকে। যদিও ব্রিটিশ আমলে এই দেশে ‘কালাপানি’ কথাটি দিয়ে ‘দীপান্তর দণ্ড’ বোঝানো হতো কিন্তু এখানে শরবত-এ-কালাপানি দিয়ে ময়লা পানির তৈরি শরবত বোঝানো হয়েছে।

এদিকে, নিজেকে একজন সমাজকর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া মিজানুর যে জগ আর গ্লাস সামনে তুলে ধরেছিলেন, তার পানিতে ময়লা ভাসতে দেখা যাচ্ছিল বলে বিডিনিউজ২৪.কম পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে।

মিজানুর জানান, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ওয়াসার এমডিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

অপরদিকে, সম্প্রতি ওয়াসার এমডি তার প্রতিষ্ঠানের পানিকে সুপেয় দাবি করার পটভূমি রয়েছে অবশ্য। গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের ওয়াসার নানান দুর্নীত বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সঙ্গে এর সরবরাহ করা পানির নিম্নমানের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে সেই পানিকে পানের উপযোগী করতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয় বলে তথ্য উপাত্ত দিয়ে জানানো হয়।

টিআইবির ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওয়াসার এমডি তাকসিম খান বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’ এছাড়াও টিআইবিরেআলোচ্য প্রতিবেদনকেনিম্নমানের বলে দাবি করেন ওয়াসা এমডি তাকসিম।নিউজওয়ান২৪.কম/আরএ

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত