ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘বৃদ্ধাশ্রম’ 

ইত্যাদি ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১১ এপ্রিল ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বৃদ্ধাশ্রম। শব্দটি শুনতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে একটি আবাসিক বাড়ি। যেখানে পরিবার পরিত্যক্ত বৃদ্ধ মানুষেরা একটি আশ্রয় খুঁজে পায়। 

অনেকের কোনো আপনজন নেই, অনেকের আবার নিজের পরিবারেই ঠাঁই হয় না। কোনো পরিবার বৃদ্ধ মানুষটিকে রেখে যায় এবং অর্থ দেয় বৃদ্ধাশ্রমকে। যার বিনিময়ে বৃদ্ধাশ্রম মানুষটিকে দেয় আশ্রয় ও সেবা। 
 
কিন্তু আজ আমরা আপনাদের সামনে যে বৃদ্ধাশ্রমকে তুলে ধরবো, তা একেবারেই অন্যরকম। এখানে আশ্রয় পাওয়া যে মানুষগুলোকে আপনারা দেখছেন তাদেরকে আনা হয়েছে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে। তাদের কেউ ছিল; রোগযন্ত্রণায় কাতর, কেউ ছিল অনাহারে, কেউ ছিল উন্মাদ কেউবা নাম ঠিকানা ভুলে হারিয়ে গেছে।

এমনসব মানুষগুলোকে পথ থেকে তুলে এনে, নিজের কাছে রেখে বিনামূল্যে তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করছেন ৩২ বছর বয়সী এক মহৎপ্রাণ তরুণ, যার নাম মিল্টন সমাজদার। 

যিনি এ মানুষগুলোকে দেখেন নিজের বাবা-মা’র মতোন এবং ডাকেন বাবা-মা বলেই। চলুন তার কাছ থেকেই জেনে নিই কী ভাবে তিনি এসব করছেন?

‘আসসালামু আলাইকুম, আমি মিল্টন সমাজদার। আমি উক্ত চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার (বৃদ্ধাশ্রম) প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী। আমি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এ বৃদ্ধাশ্রমটা পরিচালনা করছি। আমি যখন শুরু করেছিলাম, আমার এ বৃদ্ধাশ্রমে একজন বৃদ্ধ অসহায় বাবাকে দিয়ে। তখন আমি ওই বৃদ্ধকেই শুধু সাহায্য করতে চেয়েছিলাম এবং কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। তো ধীরে ধীরে একজন, দুজন, তিনজন করেতে করতে আমার আমার কেন্দ্রে এ পর্যন্ত প্রায় ১০২ জন লোকের আশ্রয় হয়েছিল।
 
বর্তমানে আমার ৫৩ জন বাবা এবং একজন প্রতিবন্ধি শিশু আছে। এখানে যে বাবা-মা’রা থাকছেন এরা প্রত্যেকেই বাজারের পাশে, রাস্তার মোড়ে, ডাস্টবিনের পাশে অসুস্থ অবস্হায় হয়ে পড়ে ছিল। তাদের শরীরে ঘা, ক্ষত ও বিভিন্ন পোকা-মাকড় ছিল এবং তারা নিজেরা হাটা-চলা করতে পারে না। 

এখানে যে বাবা-মা’রা আছে; আমি চেষ্টা করি এদের ভালো রাখার জন্য। এদেরকে আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ভালো খাবার-দাবার, ভালো ওষুধ-পত্র, বিনোদনের জন্য টিভি এবং পরিস্কার কাপড়-চোপড়ের জন্য ওয়াশিংমেশিনের ব্যবস্থা করা, ভালো চিকিৎসার এবং কষ্ট লাঘবের জন্য বিভিন্ন মেডিকেল যন্ত্রপাতি আছে আমার।

আমি চেষ্টা করেছি তাদের বেশিরভাগকেই হসপিটালের বেডে রাখতে। যেহেতু তারা বেশি অসুস্থ, তাদের নরমাল বেডে রাখলে কষ্ট ও ঝামেলার ব্যাপার এর জন্য আমার বেশিভাগ বেডই হসপিটালের মতো। এখানে বেশিরভাগ জটিল রোগী থাকার কারণেই মোটামুটি একটি হসপিটাল সেটআপ দিতে হয়েছে। এবং খাবারের মানটিও সেভাবেই বজায় রাখতে হয়। আমরা এখানে পাঁচ বেলা খাবারের ব্যবস্থা করি।

এক মহৎপ্রাণ তরুণ, যার নাম মিল্টন সমাজদার (ফাইল ফটো)

বর্তমানে আমার এখানে ১৩ জন স্টাফ কর্মরত। যারা বৃদ্ধ বাবা-মা’কে পরিচর্যা করেন সর্বক্ষণ। এখানে যে স্টাফরা কাজ করে তারা চব্বিশ ঘন্টা থেকেই কাজ করে। তাদের সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই। যেহেতু আমার প্রতিষ্ঠানটি ছোট তাই এদের বাইরে থেকে বারবার এনে ডিউটি করানো সম্ভব নয়। এদের বেতনও খুব কম দেই।
 
সব মিলিয়ে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আমি বলবো না যে, এই বৃদ্ধ বাবা-মা’কে। কারণ আমার একার পক্ষে ৫৪, ৫৫ জন অসুস্থ বৃদ্ধকে নিয়ে কোনোভাবেই ভালো থাকা সম্ভব না। আমার একটি ফেসবুক পেইজ আছে। সেই পেইজের ছবি, ওয়েব সাইটের ছবি এবং ভিডিও দেখে অনেকেই ভুল বুঝে তাদের বাবা-মাকে আমার এখান থেকে নিয়ে গেছে। আশা করি; যে বাবা-মা’রা আমার কাছ থেকে চলে গেছে তারা ভালো আছেন।

এ ছাড়া আমি এখনো চাই আমার কাছে যে বাবা-মা’রা আছেন, তাদের সন্তানরা যেন তাদেরকে এসে নিয়ে যায়। শেষে আমার সকলের নিকট একটিই অনুরোধ, যেন কোনো বাবা-মা রাস্তায় না আসুক, কোনো বাবা-মা ঘর হারা না হোক, কোনো বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে না আসুক।

সবার নিকট এই দোয়া চাচ্ছি, আমি যেন বৃদ্ধ বাবা-মা এবং আমার পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারি। আমি এটাকে আসলে মনে-প্রাণে বৃদ্ধাশ্রম বলতে নারাজ! কারণ এটা আমার পরিবার, আমি একাই যেহেতু চালাচ্ছি আমার ইনকামে এবং আমি এদের সম্মান দিয়ে থাকি, এরা আমার বাবা-মা। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আর আপনাদের সামর্থনুযায়ী আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন।’

পরিশেষে...
পরিবার পরিত্যক্ত এই সকল বৃদ্ধ/বৃদ্ধাকে প্রতিপালন করা আমার, আপনার তথা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

আসুন আমরা পরিবার পরিজনহীন বৃদ্ধ অসহায় অসুস্থ মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং বিনোদনসহ অসহায় রাস্তায় পরে থাকা মানুষের পাশে দাড়াই।

আপনি নিজে এসে দেখে অসহায় বৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে বুঝে তার পরে (একটু) সামান্য সহযোগিতা করুন।

যে যা পারেন তাই নিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। যদি আপনি সহযোগিতা করেন তবে ভালো ভাবে বেঁচে থাকবে কিছু সংখ্যক বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষ।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত