ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

বিএনপি’র গল্পটা এমনই আলাদা...

এহছান লেনিন

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৯  

আমার এক বন্ধু আছে। দেশে থাকতে তার সঙ্গে বেশ নিবিড় যোগাযোগ ছিল। বৈদেশে এসেও তা অটুট রয়ে গেছে নানা কারণে। নির্বাচনের আগে যখন তার সঙ্গে কথা হয় তখন সে বলেছিল তার নামে কম করে হলেও ১৮টা মামলা ঝুলছে; বউ-বাচ্চা নিয়ে বেশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে! 

মেধাবী বলতে যা বোঝায় বন্ধু আমার তার চেয়ে ঢের বেশি। ওর কথা ভেবে অন্যরকম একটা কষ্টানুভূতি হয়, তা বোঝাতে পারবো না। জেলে গেল, মারা গেল মা; যেদিন বাচ্চাটা হলো সেদিন ও হাজতখানায়। বাচ্চাটার মুখ দেখলো কম করেও দুসপ্তাহ পর। একজন বাবা কতোটা অসহায় হলে পড়ে তার প্রথম সন্তানকে না দেখে দু'সপ্তাহ কাটিয়ে দেয়, তা ভাবতেই মায়া হয়। 

আমি জানি সারা বাংলাদেশে এমন অসংখ্য বিএনপি নেতা-কর্মী আছে যাদের অবস্থা আমার সেই বন্ধুটার চেয়ে কোনো অংশে ভালো নয়! জানি না তারা কীসের আশায়, কীসের মোহে, কাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য এমন বিসর্জনের গল্প রচনা করে যাচ্ছেন!

তাহলে বলছি 'সেই তাদের' গল্প। লন্ডনে তারেক রহমানের আশেপাশে থাকেন এমন হাফ ডজন নেতার কথাই বলি। বিদেশে আসার পর আমি দেখেছি, কথা বলে জেনেছি, কতোটা নীতিবিবর্জিত এসব কথিত নেতারা। 

নির্বাচনের দু'দিন আগে পর্যন্ত তারা শতভাগ নিশ্চিত ছিল বিএনপি ক্ষমতায় যেতে না পারুক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে না। আমি এমনও শুনেছি, জানুয়ারির ৫ তারিখ ওরা বহর নিয়ে দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। টিকিটের টাকার জন্য বিভিন্ন দেশের বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে। 

এটা বলে রাখি, প্রবাসে বিএনপির নেতারা রাজনীতির নামে মোটামুটি ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। মাহিদুর রহমান নামে সিলেটের এক ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি কীনা আবার বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। ভদ্রলোক নাকি বেশ ধার্মিক। তবে, ইউরো আর পাউন্ড ছাড়া কখনো প্রবাসের কোনো কমিটি তার হাত দিয়ে বের হয়নি।

কমিটি করা বা তারেক রহমানের সাক্ষাত পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে পকেট ভারি করার নেতা কিন্তু আরো আছে। প্রবাসে দলীয় কর্মসূচি পালনের আগে তাদের কাছে রাউন্ড টিকিট পাঠিয়ে দিতে হয়, স্টার মানের আবাসিক হোটেল ছাড়া তাদের সুমতি পাওয়া অসম্ভব! কর্মসূচি শেষে আবার নাকি তাদের পকেটে ইউরো গুঁজে দিতে হয়! 

অথচ আমার সেই বন্ধু এসব কথিত নেতাদের ক্ষমতায়নের জন্য আজ পালিয়ে বেড়ায়। বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহে হন্যে হয়ে মানুষের কাছে হাত পাতে। 'দোস্ত, আব্বাকে বাঁচাতে পারমু তো?'
 
শুধু কী মাহিদুর? হুমায়ুন কবির নামে আরেকজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আছেন, যার দম্ভের কাছে নেতাকর্মীরাও নাকি ভিড়তে পারেন না। শুনেছি নির্বাচনের আগেই তিনি বিএনপির মন্ত্রিপরিষদও গঠন করে ফেলেছিলেন! 

কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা সায়েম, তাদের সবারই এখন কাড়িকাড়ি অর্থ। বিদেশে দামি গাড়ি হাঁকান, বিলাসী জীবন যাপন করেন। ঢেউ গোনার টাকায় নানা ব্যবসা গড়েছেন তারা। 

তারেক রহমানের পিএস সানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ আদান-প্রদানের চিত্র যদি বাংলাদেশে অবস্থানরত একজন বিএনপি কর্মীও দেখে তাহলে সে আর এই দলটা করবে কীনা সন্দেহ। 

আমি জানি না, আমার এই লেখাটা কে কীভাবে নেবেন। পুরো লেখাটা আমার সেই বন্ধুকে উদ্দেশ করেই লিখেছি। ওর বৃদ্ধ বাবাটা প্রচণ্ড অসুস্থ, ওর স্ত্রী বাচ্চাটাকে মানুষ করার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করছে। ওর ভাইটার চাকরি হয় না। ওর বোনটার বিয়ে বারবার ভেঙে যায়- ভাইয়ের মামলাময় জীবনের কথা শুনে। 

দল ক্ষমতায় এলেও যে ওদের জীবন বদলে যেত এমন নয়, ওরা এমনই থাকবে, এভাবেই ত্যাগ স্বীকার করে যাবে! আর কেউ কেউ বিদেশে বসে 'রাজনৈতিক বাণিজ্যের' অর্থে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন, টেবিল চাপড়ে বলবেন- 'দেশের নেতাকর্মীরা সব ধইঞ্চা, বুকে সাহস নাই, খালি মুখে ফডং ফডং।'

[অসম্পাদিত বিভাগে সমস্ত লেখার মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। এর জন্য নিউজওয়ান২৪.কম কর্তৃপক্ষ কোনোমতেই দায়ী হবে না]

লেখক: ফিনল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক

আরও পড়ুন
অসম্পাদিত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত