ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

জেলখানায় কয়েদিদের এফএম স্টেশন!

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

তলোজা জেলের কয়েদিদের রেডিও স্টেশন

তলোজা জেলের কয়েদিদের রেডিও স্টেশন

এফএম রেডিও স্টেশনটি চালান তিন কয়েদি। হ্যাঁ, জেলখানা থেকে সম্প্রচার হয় এই স্টেশনের। রেডিও জকি, সাউন্ড মিক্সার আর স্ক্রিপ্ট লেখক- সবাই জেলখাটা কয়েদি।

এই অদ্ভূত রেডিও স্টেশনটির অবস্থান মুম্বাইয়ের একটি জেলখানায়। প্রতিদিন দুপুরে এক ঘণ্টার থিমভিত্তিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয় এখান থেকে। বিনোদনমূলক গানের সঙ্গে অনুষ্ঠান থেকে সুখী-সুন্দর জীবন যাপনের শলা-পমরামর্শ ও টিপস দেওয়া হয় এখান থেকে। 

জানা গেছে একসময়ের কয়েদি বলিউড সুপারস্টার সঞ্জয় দত্তের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ ধরনের চমকপ্রদ রেডিও স্টেশন চালাচ্ছেন কয়েদিরা।  

জেলখানা মানেই বাধ্যতামূলক বন্দিত্ব, অন্ধকার কুঠুরি, উঁচুপাঁচিলের ঘেরাটোপে জীবন- এমন চিত্রই ফুটে ওঠে মানসপটে। কিন্তু ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের তলোজা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবেশ অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে এই এফএম স্টেশনটি। 

প্রত্যেকদিন দুপুর ১২টায় স্পিকারে শোনা যায় কয়েদিদের জন্য সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠান। বেশিরভাগই আশা জাগানিয়া কথা বলা হয় এতে। কখনো শোনা যায় বক্তা বলছেন, জীবন আজ যতোই কঠিন হোক না কেন, কিন্তু এমনটা সব সময়ে থাকবে না। শিগগিরই ভাল দিন আসবে আপনার। এই কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠে কিশোর কুমারের মন ভাল করা জনপ্রিয় ফিল্মি গান- জিন্দেগি এক সফর হ্যায় সুহানা/ ইহা কাল কেয়া হো কিসনে জানা (জীবন এক চমৎকার সফর/এখানে আগামীকাল কী ঘটবে বলতে পারে না কেউ)। 

জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট কৌস্তভ কুর্লেকর এ প্রসঙ্গে বলেন, সঙ্গীত আত্মায় পৌঁছায় আর তা কয়েদিদের (স্ট্রেস) মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কৌস্তভ আরো বলেন, জেলখানায় এফএম স্টেশন খোলার আইডিয়া অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এজন্য টেকনিক্যাল সহায়তার দরকার ছিল। 

yarabda jail in pune where sanjay dautt served his term

এ কাজের জন্য নয়া মুম্বাইয়ের এক এনজিও সাউন্ড মিক্সচার, ল্যাপটপ এবং মাইক্রোফোনসহ নানান ইকুইপমেন্ট দেয়। তারা কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দিতে একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারেরও ব্যবস্থা করে। 

বর্তমানে প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিনজনের একটি দল এক ঘণ্টার রেডিও শো চালায়। এদের একজন রেডিও জকি, একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং একজন সিস্টেম অপারেটর হিসেবে কাজ করছে। 

জেল সুপার কৌস্তভ আরো জানান, যেসব কন্টেন্ট সম্প্রচার হয় সেগুলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয় এবং সম্প্রচারের আগে কর্তৃপক্ষ তা চেক করে দেয়। 

কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ আনন্দ জানান, রেডিও স্টেশন চালানো তিন কয়েদি খুব দ্রুত শিখেছে। তাদের দুই সপ্তাহের চেয়ে কম সময় লেগছে সবকিছু বুঝে নিতে। প্রায় ৭০ হাজার গানের তালিকা থেকে প্রতিদিনের গান বাছাই করে তারা। প্রথমে একটা থিম ঠিক করা হয় যেমন- আনন্দ; জীবন; ভালোবাসা ইত্যাদি। এরপর স্ক্রিপ্ট রাইটার রেডিও জকির (আরজে) জন্য স্ক্রিপ্ট লিখে দেয়। 

পুনের ইয়ারবদা জেলখানার রেডিও স্টেশন অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তলোজা জেলখানার এই রেডিও স্টেশন শুরুর পেছনে। ইয়ারবদা রেডিও স্টেশনে একসময়ে জকির কাজ করেছেন সঞ্জয় দত্ত। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই ব্লাস্ট মামলায় তখন তিনি জেল খাটছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে মুম্বাইর থানে জেলখানায়ও এমন রেডিও স্টেশন খোলা হয়।  

এখন তালোজা জেলখানার একটি ওয়াচপোস্টকে রেডিও স্টেশনে রূপান্তর করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা কয়েদিদের দিয়েই স্টেশনটি চালানো। সে মতে নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারিতে তারা চার ঘণ্টার জন্য বসে এবং পরদিনের জন্য কন্টেন্ট তৈরির কাজ করে। শোয়ের প্রথম ট্রায়েল হয় চলতি বছরের ২ জানুয়ারি আর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে গেছে কয়েদিদের দিয়ে পরিচালিত এবং কয়েদিদের জন্য সম্প্রচারিত এই স্টেশনের। এনবিটি