ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

ইলিশের ভালো-মন্দ

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৬ আগস্ট ২০১৯  

ইলিশ (ছবি: সংগৃহীত)

ইলিশ (ছবি: সংগৃহীত)

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। এটি লোভনীয় স্বাদের একটি মাছ। তবে ইলিশের সঙ্গে বাঙ্গালির প্রেমটা বেশ পুরোনো। এই যেমন, বৈশাখের প্রথম দিন পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ না হলে যেন আমাদের চলেই না। 

পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ

বাংলাদেশে ইলিশের জনপ্রিয়তা অনেক। এর নানা পদের মধ্যে রয়েছে ইলিশ দোপেঁয়াজা, ইলিশ ভাজা। সর্ষে ইলিশ, ইলিশের মালাইকারী, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি ইত্যাদি। ইলিশের জনপ্রিয়তা যে কেবল খাবার পাতে তা নয়, সাহিত্য এমনটি কূটনীতিতেও এটি উঠে এসেছে বহুবার। 

বাঙালির ইলিশ প্রীতির স্বীকৃতি মিলেছে আন্তর্জাতিকভাবেও। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ মাছের অতিরিক্ত কাঁটা ও গন্ধের জন্য সমাদর মেলেনি তেমন। ইলিশের প্রতি বাঙালির অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকলেও ইলিশের ভালো-মন্দ নিয়ে ধন্দে পড়ে যান অনেকেই। সাগরের ইলিশ কোনটা, কোন ইলিশের স্বাদ বেশি, কোনটাই বা নদীর ইলিশ— সবকিছু মিলিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়তে হয়। 

আপনি কি একজন ইলিশপ্রেমি? দারুণ স্বাদের ইলিশ মুখে পুরতে চান? তবে এই লেখাটি আপনার জন্যই। চলুন বিচরণ করা যাক ইলিশের রাজত্বে- 

নদীর ইলিশ বনাম সাগরের ইলিশ: 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, ইলিশ সারাবছর সাগরে থাকে। কেবল ডিম পাড়ার সময় এরা নদীতে আসে। দুই ধরনের ইলিশের আকারই টর্পেডো টাইপ। তবে সাগরের ইলিশ একটু সরু আর লম্বা হয় আর নদীর ইলিশ হয় খানিকটা বেঁটেখাটো। 

আবার নদীর ইলিশের মধ্যে পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ একটু বেশি উজ্জ্বল হয়। নদীর ইলিশ একটু বেশি রূপালি ও চকচকে হয়। সমুদ্রের ইলিশ তুলনামূলক কম উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এছাড়া নদীর ইলিশ বিশেষ করে পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার ইলিশ মাছের আকার হয় পটলের মতো। অর্থাৎ, মাথা ও লেজ সরু এবং পেট হয় মোটা। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্র নয় বরং নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি। তবে নদী আর সাগরের ইলিশের মূল পার্থক্য বোঝা যাবে খাওয়ার সময়। 

নদীর ইলিশ কেন বেঁটে-মোটা হয়? 

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রহমান বলেন, ইলিশ যখন ডিম ছাড়তে সাগর থেকে নদীতে আসে, তখন তারা নদীতে থাকা প্ল্যাংকটন বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী খায়। আর এই কারণেই ইলিশের শরীর বেঁটে ও মোটা হয়। অর্থাৎ এই প্ল্যাংকটন খাওয়ার ফলেই ইলিশের দেহে এক ধরণের চর্বি জমে, যা এর আকৃতিকে সাগরের চেয়ে আলাদা করে। 

কোন ইলিশের স্বাদ বেশি? 

ভোজন রসিকদের মতে নদীর ইলিশ ও সাগরের ইলিশের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে ইলিশ যত বড় হবে, তার স্বাদ তত বেশি হবে। আকারে বড় ইলিশকে তাই অনেকে পাকা ইলিশও বলে থাকেন। 

অন্যদিকে, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্ষার ইলিশের স্বাদ বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি স্বাদ পাওয়া যায় বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে। লোনা পানি ও মিঠা পানিতে বাস করার ওপর নির্ভর করেও ইলিশের স্বাদে পার্থক্য হয়। এক্ষেত্রে, নদীর ইলিশের স্বাদই বেশি হয়। 

ইলিশের স্বাদ ডিম ছাড়ার সময়ের ওপরও নির্ভর করে। অর্থাৎ, ডিম ছাড়ার আগ অব্দি ইলিশের স্বাদ বেশি হয়। ডিমওয়ালা ইলিশের মাছের পেটি পাতলা হয়ে যায় এবং এর চর্বি কমে যায়, তাই স্বাদও কমে যায়। 

পদ্মার ইলিশের এত সুনাম কেন? 

পৃথিবীতে যত ইলিশ উৎপন্ন হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে ইলিশ উৎপন্ন হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ। কিন্তু কেন এত খ্যাতি? 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় ইলিশ যে ধরণের খাবার খায় এবং পানির প্রবাহের যে মাত্রা থাকে তাতে তার শরীরে এক ধরণের চর্বি জমা হয়। আর তাই যেকোনো জায়গায় ইলিশের চেয়ে পদ্মার ইলিশের স্বাদ ভিন্ন। 

ডিমছাড়া ইলিশ আর ডিমওয়ালা ইলিশ চিনবেন কী করে? 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে ক্রেতা কিছুটা অভিজ্ঞ না হলে মুশকিল। সাধারণত, আগস্ট মাসের পর থেকে ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হয়। সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর অব্দি এই মৌসুম চলে। ডিমওয়ালা ইলিশ কিছুটা চ্যাপ্টা হয়। এদের পেট মোটা হয়। এছাড়াও ডিমওয়ালা ইলিশের পেট টিপলেই মাছের পায়ুপথে ছিদ্র দিয়ে ডিম বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে, ডিম ছাড়া ইলিশের পেট থাকে আলগা ও ঢিলা। 

কোন ইলিশ কেনা উচিত নয়? 

ইলিশের খ্যাতির মূলে রয়েছে এর স্বাদ। আর এই স্বাদ পরিপূর্ণভাবে পেতে বড় ইলিশের বিকল্প নেই। তাই, ছোট ইলিশ বা জাটকা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলোর স্বাদ হয় না। এছাড়াও যেসব ইলিশ দীর্ঘদিন কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়, তাদের স্বাদও কমে যায়। এসব চেনার জন্য খেয়াল রাখতে হবে এই মাছের ওজ্জ্বল্য কম থাকে। 

ইলিশের উপকার: 

দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে ইলিশ। এছাড়াও মানব স্বাস্থ্যের জন্যও এটি বেশ উপকারি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। এই মাছ খেলে মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয়। এটি হৃদযন্ত্র ভালো রাখে ও রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি বাত বা আর্থারাইটিস এর হার কমিয়ে দেয়।  

তথ্যসূত্র- বিবিসি

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি