ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

ব্যাটসম্যানদের আর্তি

‘রান চাই না, উইকেট বাঁচাতে চাই’

খেলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৩০ মে ২০১৬   আপডেট: ২২:৪১, ২ জুন ২০১৬

ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে সব সময় ধান্ধায় থাকেন চার-ছয় মেরে কীভাবে রান রেট বাড়ানো যায়। কিন্তু যখন মুস্তাফিজ আসেন বোলিং করতে তখন তাদের চিন্তা থাকে একটাই- কিভাবে উইকেট বাঁচানো যায়! সদ্য সপাপ্ত আইপিএলের একটি ম্যাচের টিভি ধারা বর্ণনার অংশ এটি।

টুর্নামেন্টের মেষের দিকের কমেন্ট্রিগুলোতে দেখা গেছে, মুস্তাফিজ উইকেট নেবেন এবং কম রান দেবেন- এটাই যেন স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিছেন তারা। মুস্তাফিজ প্রতিপক্ষের বড় কোনো উইকেট ফেলে দিয়েছেন- এমন ক্ষণে ধারাভাষ্যকার খুব সহজস্বরে বলছেন, ‘তার যা করার তিনি করেছেন’ কিংবা যার জন্য ক্যাপ্টেন তাকে বোলিংয়ে আনলেন- ‘তিনি তাই করলেন’- খুব সহজ কিন্তু অনন্য স্বীকৃতির বয়ান।

বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের আলোচনার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় দলের তাক লাগানো সেনসেশনকে নিয়ে বিন্দুমাত্র যে বাড়িয়ে বলেননি ভাষ্যকাররা- তার প্রমাণ এবার খাতা-কলমেও মিললো।

হ্যাঁ, যা ভাবা হয়েছিল তাই। মুস্তাফিজুর রহমানই এবারের আইপিএলের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার। রবিবার মধ্যরাতে ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএলের ফাইনাল শেষে চির চেনা সেই লাজুক হাসি মুখে ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে গেলেন মঞ্চের দিকে- যেন কিছুটা বিব্রত। তুমুল করতালিতে আইপিএল চেয়ারম্যানের হাত থেকে নিলেন স্মারক চেক ও ট্রফি।

পুরো টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল ব্যাটসম্যানদের কাছে মূর্তিমান আতংকের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিলেন বাংলার কাদা-মাটি-জলের মুস্তাফিজ। পুরস্কারটা আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সবার মনে আর বিবেচনায়। বাকি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। তো ফাইনালের আগে তো তা সম্ভব নয়। রবিবার ফাইনাল শেষে সেই ঘোষণা এলো। পুরস্কার উঠল মুস্তাফিজের হাতে।

আইপিএল অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পরিচালিত ভোটে এই গৌরবের পালক মাথায় পড়াতে ৮৩.২ শতাংশ ভোট দিয়েছেন ভক্তরা তাকে।

আর এই লড়াইয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর অবস্থান! বলতে পারেন যোজন যোজন দূরে। বেঙ্গালুরুর লোকেশ রাহুল সেইজন যিনি পেয়েছেন মাত্তর ৬.৫ শতাংশ ভোট। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ক্রুনাল পান্ডিয়া পেয়েছেন তারও অর্ধেক প্রায়- ৩.৭ শতাংশ।

টুর্নামেন্টে স্রেফ একটি ম্যাচই মুস্তাফিজ খেলতে পারেননি হ্যামস্ট্রিং চোটের যন্ত্রণায়। বাকি ১৬ ম্যাচ খেলে ঝুলিতে ভরেছেন ১৭ জনের উইকেট। যৌথভাবে টুর্নামেন্টের পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ওভারপ্রতি রান খরচা মাত্র ৬.৯০। কমপক্ষে ২০ ওভার বোলিং করাদের মধ্যে এটি এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কঞ্জুস বোলিং ফিগার।

তবে পরিসংখ্যানই সব কিছু নয়। মুস্তাফিজ আইপিএল মাতিয়েছেন তার মনোমুগ্ধকর জাদুকরী স্কিল দিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের পরপরই আইপএলের মতো আরেক বিশাল পরিসরে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এখনকার সবচেয়ে দামি অস্ত্রটির সামনে প্রতিপক্ষ ছিল অনকেগুলো বিষয়। প্রথমবারের মতো একা দেশের বাইরে দীর্ঘসময় থাকা- সঙ্গে নাই জাতীয় দলের বড়ভাইরা, ছিল ভাষার দূরত্ব, অচেনা পরিবেশ- প্রতিটি ম্যাচে কঠিন সব পরিস্থিতি, দলের ক্যাপ্টেন অস্ট্রিলিয়ান ডেভিড ওয়ার্নার অসংখ্যবার হাতে তুলে দিয়েছেন বল। পুরো মাঠ চেয়ে আছে- টিভিপর্দায় চেয়ে থাকা মা-বাবাসহ দেশের কোটি কোটি দর্শক আর হায়দারাবাদের সমর্থক- সবার কাছে প্রমাণ করতে হবে ক্ষুদে ওস্তাদকে!

তবে প্রতিবারই আগুন ঝড়িয়েছেন, কাঁপিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের ভিত্তিমূল, ছিটকে পড়েছে, হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ব্যাটসম্যানরা উইকেটে- এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে আক্ষরিক অর্থেই মুস্তাফিজের কাটারের মোকাবেলা করত গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেছেন উইকেটে- পেছনে চূড়মার হয়ে গেছে তিনকাঠির স্ট্যাম্প।
দারুণ স্লোয়ার ও দুর্বোধ্য কাটারে নিজেকে চিনিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বে।

তবে আইপিএলে দেখিয়েছেন, ইয়র্কারেও কতটা খুনে হয়ে উঠতে পারেন ২০ বছর বয়সের এই ‘ক্ষুদে ওস্তাদ’। তার পরিণত ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের ঝলক প্রশংসার ফুলঝুরি ফুটিয়েছে সাবেক অনেক গ্রেটের মুখে।

এবারের আইপিএলে মুস্তাফিজ বিশ্ব ক্রিকেটকে কতোটা মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন তা ফুটে উঠেছে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে। ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি আগের ম্যাচ। শংকা ছিল ফাইনালে লিটল ম্যাস্ট্রো খেলবেন কি না। এই বিষয়টি নিয়ে আন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়- “ফাইনালের আবহের মধ্যেই বেঙ্গালুরুর আকাশে এখন যাঁকে ঘিরে সব থেকে বড় সংশয়ের কালো মেঘ তিনি মুস্তাফিজুর রহমান। ফাইনালের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচে তিনি হঠাৎ উধাও। যাঁকে নিয়ে এত কথা। যাঁর বোলিং নিয়ে রীতিমতো শোরগোল ক্রিকেট বিশ্বে সেই মুস্তাফিজুর নেই আইপিএল-এর এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিলই। কিন্তু জানা গেল তাঁর নাকি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট। তাই গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে কোটলায় তিনি বিশ্রামে ছিলেন। দলের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বোলারকে নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের টিম ম্যানেজমেন্ট।

আশিস নেহরার মতো বোলার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছে। এমন অবস্থায় ফাইনালে উঠলে তখন মুস্তাফিজুরকে না পেলে আরও বিভ্রাট। তাই তাঁকে বিশ্রাম দেওয়াই সমীচীন মনে করেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট।
এই মুহূর্তে ফাইনালে দল। তাই মুস্তাফিজুরকে খেলানোর চেষ্টায় টিম ম্যানেজমেন্ট। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ফেরাতে লড়াই দেবে দল। দলের ফিজিওদের সেদিন থেকেই কাটার মাস্টারকে নিয়ে লড়াই চলছে। যে ভাবেই হোক ফাইনালে ফেরাতেই হবে মুস্তাফিজকে…”

মুস্তাফিজ যে ভারতীয়দের কতোটা মোহাবিষ্ট করেছেন তা এখানে অকৃপণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আনন্দবাজারের রিপোর্টার।

এখন টাইগার বাহিনীর এই অমূল্য ধন ‘কোহিনূর হিরা’ তার দেশের জন্য সামনের দিনগুলোতে শীর্ষ সব গৌরবের মুকুট ছিনিয়ে আনবেন- তা দেখার অপেক্ষায় আছে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সমগ্র বাংলাদেশ।

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত