ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

রাজনৈতিক দলগুলোর ৫৩১ সুপারিশ ইসিতে

নিউজ ওয়ান টুয়েন্টি ফোর ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২০ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ১১:১৪, ২০ অক্টোবর ২০১৭

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৪০টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে। এসব দল থেকে ৫৩১টি সুপারিশ পেয়েছে ইসি। সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলো নির্বাচনকালীন সরকার ও সেনাবাহিনিকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার মতো প্রস্তাব ইসির কাছে রেখেছে। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসির এখতিয়ারের মধ্যে থাকা অভিন্ন সুপারিশ রয়েছে বেশি।

৩৭টি দলের মধ্যে অন্তত ১৮টি দল সেনাবাহিনি মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে অনেকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে বা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার সুপারিশ করেছে। অন্তত ১২টি দল সংসদ ভেঙে ভোটের সুপারিশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের প্রস্তাবও অন্তত ১০ দলের। ৩টি দল সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নিয়েও সরকার গঠনের কথা বলেছে।

গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মত বিনিময় হয়েছে রাজনৈতিক দলের। এখন শুধু বাকি পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ। যা ২২, ২৩ ও ২৪ অক্টোবর বৈঠক করবে ইসি।

দেশের প্রধান ৩টি দলের মধ্যে ৯ অক্টোবর জাতীয় পার্টি ও ১৫ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপ শেষ করে ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসেছে ইসি।

গত ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু হয়ে ২৪ অক্টোবর শেষ হবে। গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সঙ্গে মত বিনিময় হয়েছে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে নারী নেত্রী, পর্যবেক্ষক সংস্থা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ চলবে।

৪০ দলের যত সুপারিশ-
১. সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট: ইভিএমে আপত্তি, বিদায়ী সিইসিকে নিয়ে ইসি পুনর্গঠনের জাতীয় পরিষদ গঠন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার অন্যতম। দলটি ৫টি দফাওয়ারি সুপারিশ করে।

২. বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমল): সংসদ ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা সুপারিশ।

৩. খেলাফত মজলিশ: সহায়ক সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, নিবন্ধন শর্ত শিথিল, নির্বাচনী ব্যয় চারগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ২৪ দফা সুপারিশ।

৪. বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: ইভিএমের বিপক্ষে, না ভোটের পক্ষে, সমঝোতার ভিত্তিতে তদারক সরকার, ভোটার অনুপাতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ২৩ দফা সুপারিশ করেছে দলটি।

৫. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা): নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, সংসদ ভেঙে ভোট, ইভিএম বাতিল, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ও সেনা মোতায়েনসহ ১৪ দফা সুপারিশ জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির।

দলটির প্রস্তাব হচ্ছে- নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে ৩ মাসের অবকাশকালীন ছুটি দেয়া যেতে পারে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সাবেক বিচারপতি এবং দেশের বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে সৎ ও গ্রহণযোগ্য নির্দলীয় ব্যক্তি দ্বারা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে।

৬. বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট: সেনাবাহিনি মোতায়েন, ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে রাখা ও নির্বাচনী বিতর্কের ব্যবস্থা রাখা, দলের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা বাতিলসহ ১০ দফা সুপারিশ করে দলটি।

৭. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএমের বিপক্ষে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে ইসিকে আইনের আওতায় আনাসহ ১৫ দফা দাবি।

৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ: সেনা মোতায়েন, ধর্মবিরোধী কোনও দলকে নিবন্ধন না দেয়া, ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনও আইন না করা, একই পোস্টারে সব প্রার্থীর পরিচয় ও প্রতীক, একই মঞ্চে প্রার্থীদের বিতর্ক আয়োজনসহ ১৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে।

৯. বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি: সেনাবাহিনি মোতায়েন, সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা ও কোনও জোটের প্রার্থীদের শরীক দলের যে কোনও প্রতীকে নির্বাচন করাসহ ৮ দফা সুপারিশ করে দলটি।

১০. ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ: সংসদ ভেঙে ভোট, ইভিএম ও না ভোট চালু, ৩ ধাপে ৩শ’ আসনে ভোট, সব নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশনের বহন, তফসিল ঘোষণার পর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোকে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করাসহ ১২ দফা সুপারিশ।

১১. ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন: জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনি মোতায়েনের বিপক্ষেও মত দিয়েছে দলটি। সেই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নিবন্ধন বাতিল, ভোটার সংখ্যা অনুপাতে সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরে।

১২. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি: বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন, না ভোট, প্রতি বিভাগের জন্য একদিন করে ভোট আয়োজনসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরে দলটি।

১৩. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ): নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চলমান সংসদ বিলুপ্ত করা ও বিচারিক ক্ষমতা ও সেনাবাহিনি মোতায়েনসহ ২১ দফা প্রস্তাব পেশ করে বাংলাদেশ ন্যাপ।

১৪. প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি): বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে ভোট, ‘না’ ভোট চালুসহ ১৬ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে পিডিপি। প্রধানমন্ত্রীকে ঐচ্ছিক ছুটি দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাহী প্রধান করে অপরাপর কমিশনার এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয় দলটি।

১৫. গণফ্রন্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেয় গণফ্রন্ট। এর সঙ্গে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, ইভিএম চালু, ধর্মবিরোধী দলের নিবন্ধন বাতিল, সংসদীয় আসন বাড়ানোসহ অন্তত ১২টি প্রস্তাব দলটির।

গণফ্রন্ট বলেছে, বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও (তত্ত্বাবধায়ক নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়) একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। স্বাধীনতার পরে যে সকল নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল তাদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা যেতে পারে।

১৬. গণফোরাম: জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতসহ ২২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে গণফোরাম। দলটি সুষ্ঠু ভোটে আয়োজনে ‘মানি পাওয়ার’ ও ‘মাসল পাওয়ার’- এই দুটিকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করে।

১৭. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ: কমিটিতে ৩৩% নারী চায় না জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, সেনাবাহিনি নিয়োগ ও নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে দলটি।

১৮. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি): ভোটের সময় দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার চায় এনপিপি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার ও সেনা মোতায়েনের বিপক্ষেও মতসহ অন্তত ১২টি সুপারিশ দিয়েছে দলটি।

১৯. বাংলাদেশ মুসলিম লীগ: আগে সংসদ বিলুপ্ত করে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনি মোতায়েন, নিবন্ধিত প্রত্যেকটি দলের একজন প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ২৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে দলটি।

২০.বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন: তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল, সেনাবাহিনি মোতায়েন, দলের কমিটিতে নারী রাখার বিধান বাতিল এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের নির্বাচনে অযোগ্য করাসহ ৩৮টি সুপারিশ করে ইসলামী দলটি।

২১. বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন: নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে চায় তরিকত। ইভিএম পদ্ধতি চালু, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে দলটি।

২২. বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ): সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ভোট, প্রতি ৩ আসনে একজন নারী সদস্যের অংশগ্রহণ ও ইভিএম চালুসহ ১৩ দফা প্রস্তাব বাসদের।

২৩. জাকের পার্টি: জাতীয় ঐক্য তৈরি, ইভিএম ব্যবহার, ইসির বাজেট বাড়ানোসহ ২৭ দফা প্রস্তাবনা দেয় জাকের পার্টি।

২৪. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি): সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার, সেনা মোতায়েন, না ভোটসহ ১৪ দফা প্রস্তাব জেএসডি’র। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে সংসদ নির্বাচনের সূচি যাতে ভণ্ডুল না হয় সেজন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করতে বলেছে দলটি।

২৫. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ): নতুন করে আদমশুমারি প্রতিবেদন না হওয়ায় বর্তমান আসন সীমানায় পরবর্তী ভোট চায় জাসদ। নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর কেউ যেন বিএনপি বা অন্য দলের হয়ে ভোটে অংশ নিতে না পারে, দলেল অনুদান আয়করমুক্ত করা, হলফনামার বিধান বাতিলসহ ১৭টি সুপারিশ তুলে ধরে দলটি।

২৬. জাতীয় পার্টি: বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলের প্রতিনিধিদের দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, সশস্ত্রবাহিনি মোতায়েন, ভোটারের ভিত্তিতে সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ ৮ দফা প্রস্তাব রাখে জাপা।

২৭. বিকল্পধারা বাংলাদেশ: নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিরোধ নিরসনে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন, সীমানা পুনঃনির্ধারণ না করা, বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনা মোতায়েন, না ভোট চালুসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিকল্পধারা।

২৮. ইসলামী ঐক্যজোট: জাতীয় নির্বাচনে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনি মোতায়েন না করে ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় মোতায়েন, অভিন্ন পোস্টারসহ ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরে ইসলামী ঐক্যজোট।

২৯. বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি: বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন, ইভিএম ব্যবহার এবং ঢালাওভাবে সেনাবাহিনি মোতায়েন না করাসহ ১৪টি প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

৩০. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি: বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনা মোতায়েন, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট এবং নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন বরাদ্দ, ‘না’ ভোট চালু, এনবিআর ও দুদকের মাধ্যমে যাচাইসহ ১৬ দফা সুপারিশ করে দলটি।

৩১. বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি): সংসদ ভেঙে নির্বাচন, ভোট অনুযায়ী সংসদে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ ব্যবস্থা চালু, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ তে উন্নীত করাসহ ১৭ দফা সুপারিশ করেছে দলটি।

৩২: গণতন্ত্রী পার্টি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ধর্মভিত্তিক দলের নিবন্ধন বাতিলসহ ২১ দফা সুপারিশ করেছে গণতন্ত্রী পার্টি।

৩৩. বিএনপি: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে ‘সহায়ক সরকার’ এর অধীনে ভোটের প্রস্তাব বিএনপির। ভোটের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইভিএম চালু না করা, জরুরি অবস্থার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলীয় চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকরা সব মামলা প্রত্যাহারসহ ২০টি সুপারিশ দিয়েছে দলটি।

৩৪. কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ: সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস, ভোটের সময় সেনা মোতায়েন, ইভিএম চালুসহ ১৮ দফা সুপারিশ করেছে দলটি।

৩৫. বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল: হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই ভোট, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন দলের নিবন্ধন বাতিল, ইভিএম চালু, ‘না’ ভোট চালুসহ ১৭ দফা সুপারিশ দলটির।

৩৬. বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ): শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকেও রাখার প্রস্তাব দলটির। বিএনপিকে মন্ত্রীত্ব দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপসহ ৫ দফা সুপারিশও রয়েছে।

৩৭. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি): সংসদ নির্বাচনে ভোটের ১০ দিন আগে থেকে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন করে ভোট ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপনসহ দলটি ৫ দফা সুপারিশ করে।

৩৮. আওয়ামী লীগ: সেনা মোতায়েন, সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিপক্ষে ও ইভিএম’র পক্ষে সুপারিশসহ ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। দলটি বলেছে, ভোটের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনির ওপর আস্থা রাখতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং ইসি নির্ধারিত ভোটের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনির ওপর ন্যস্ত থাকবে।

৩৯: জাতীয় পার্টি (জেপি): সেনা মোতায়েন, ইভিএমের বিপক্ষেসহ ৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে দলটি।

৪০. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি): সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে ও শর্তসাপেক্ষে ইভিএম চালু ও সীমানা বহালসহ ১২ দফা সুপারিশ দিয়েছে দলটি।

অভিন্ন অধিকাংশ প্রস্তাব-

সব দলের অংশগ্রহণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড; নিরপেক্ষতা নিশ্চিত; প্রচারে সরকারি সুবিধা বাদ; কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন; প্রবাসীদের ভোটাধিকার; অনলাইনে মনোনয়ন জমা; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তৎপরতা বন্ধ; স্বতন্ত্র প্রার্থীতায় ১% সমর্থন তালিকা বাতিল; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত রাখা; নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদান, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা; ফৌজদারি দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়া; নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা ও ভোট চাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করা; স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলকে নিবন্ধন না দেয়া; প্রার্থীর নাম, দল ও প্রতীকের উল্লেখ সম্বলিত অভিন্ন পোস্টারের ব্যবস্থা করা; নির্বাচনী বিরোধ ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, নির্বাচন কালো টাকা ও পেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাখা, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দণ্ডিতদের দুই বছর পর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতার সুযোগ বাতিল করা, যে সব দল ৩০ এর বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দেবে সে সব দলকে বেতার ও টিভিসহ সরকারি প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেয়া ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত।

সফলভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সবার সঙ্গে অক্টোবরেই সংলাপ শেষ করবো। এরপরই সুপারিশগুলো একীভূত করা হবে। যেসব সুপারিশ ইসির এখতিয়ারের মধ্যে থাকবে এবং অভিন্ন হবে- তা কমিশন একীভূত করবে। সেই সঙ্গে যেসব সুপারিশ এখতিয়ারের বাইরে রয়েছে, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে সেগুলোও একীভূত করা হবে। সার্বিক সুপারিশ কমিশনের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।’

ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাও বলেছেন, ‘সংলাপ শেষে সবার প্রস্তাব একীভূত করে আমরা একটি প্রতিবেদন করবো। আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বসবো। যেসব বিষয় আমাদের এখতিয়ারে নেই সেগুলোর বিষয়ে সরকারের কাছে প্রয়োজনে পাঠানোর জন্যে ব্যবস্থা করা হবে।’
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, যে কোনো একটি রায় হলেই তার আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে হলো কিনা তা দেখা হচ্ছে? রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক আর বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি হয়ে যাচ্ছে। এমনকি রায়ের বিরুদ্ধে মানবন্ধন, ধর্মঘট করা হচ্ছে। আমাদেরকে (বিচারক) রাস্তায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের ডিভিশন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এই শুনানি শুরু হয়।

শুনানিতে বিচারপতি জয়নুলের আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চিঠির পরও দুদক তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। প্রথমে তথ্য সরবরাহ না করলেও পরে সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। তাই ওই চিঠির আর কার্যকারিতা নেই।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, একজন বিচারক সাংবিধানিক পদে ছিলেন বলে তিনি দায়মুক্তি পেতে পারেন না। ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধান বিচারপতির এভাবে চিঠি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ চিঠির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে যেমন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয় ঠিক তেমনি সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠি।

এ পর্যায়ে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কোনো আদেশের বিচার করার এখতিয়ার হাইকোর্টের আছে কি? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ক্ষমতা বহির্ভূত কোনো আদেশ দেওয়া হলে তা দেখার এখতিয়ার হাইকোর্টের রয়েছে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সব তথ্যই দুদককে সরবরাহ করেছে, তারপরও এবিষয়ে একটি আদেশ থাকা প্রয়োজন।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই এ চিঠি দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য নয়। কারণ বিচার বিভাগ খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। সুপ্রিম কোর্ট কাউকে দায়মুক্তি দিতে পারে কি? জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠিতে বিচারপতি জয়নুলকে দায়মুক্তি দেয়া হয়নি।

দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, গত ২৮ মার্চ অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী দুদককে যে চিঠি দিয়েছিলেন তাতে নির্দেশিত হয়ে জানানোর বিষয়টি উল্লেখ ছিলো। এরপর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে অরুনাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেছেন যে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে অরুনাভ চক্রবর্তী তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

আদালত বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। এরপর কি আর এ ধরণের চিঠির গুরুত্ব আছে? খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক আইনের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী দুদকের কাজে বাধার সৃষ্টি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য ৩ বছর সাজা হতে পারে। আদালত বলেন, এক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য কি?

জবাবে দুদক কৌসুলি বলেন, আইনে আছে। তবে দুদক এখনও এ ধারা প্রয়োগ করেনি। এক্ষেত্রেও অতদূর যেতে চাচ্ছি না। তবে সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠির ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত না পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে অন্যরাও সুযোগ নেবে।

বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচিন হবে না মর্মে-দুদককে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১০ অক্টোবর রুল জারি করে হাইকোর্ট। আগামী ২৪ অক্টোবর তিন অ্যামিকাসকিউরি এই র“লের শুনানিতে অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত