ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘মেন্দি ফাঁস’ আরও চেপে বসছে আসলামের গলায়!

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ৩১ মে ২০১৬   আপডেট: ১১:০২, ২৫ জুলাই ২০১৬

ভারতে মেন্দি ও আসলাম                         -ফাইল ফটো

ভারতে মেন্দি ও আসলাম -ফাইল ফটো

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল আজ (মঙ্গলবার)। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম গোলাম নবীর দেওয়া আদেশে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। 

ইহুদি মৌলবাদী দেশ ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কর্মকর্তা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ভারতে আসলামের বৈঠক সূত্রে এ অভিযোগ আনা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার গুলশান থানায় আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন ডিবির পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী।

এতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘বাংলাদেশে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ’ আনা হয়েছে বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে।

পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টায় নানা ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম, ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা ও বোমাবাজির সঙ্গে আসামি আসলাম চৌধুরীর যোগসূত্র রয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।”

তবে অভিযোগের বিরোধিতা করে আসলাম চৌধুরীর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জামিনের আবেদনে আদালতকে বলেন, “কেবল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা আইনের অপব্যাবহার। আসলাম চৌধুরী দাওয়াত পেয়ে ভারতের এক অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির ওই নেতার সঙ্গে তার দেখা হয়। তাদের মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কী কথা হয়েছিল তা তো রাষ্ট্রপক্ষ এখানে বলতে পারছে না।”

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ছবির সূত্র ধরে ২৪ মে আসলামকে আদালতে হাজির করে মতিঝিল ও লালবাগ থানায় করা নাশকতার দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুই মামলায় ডিবি আসলামের বিরুদ্ধে ১০ দিন করে মোট ২০ দিন রিমান্ডের আবেদন করে। এ বিষয়ে ৬ আগামী জুন শুনানি হবে।

গত ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরদিন ফৌজদারি কার্যবিধির (সন্দেহজনক) ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গ্রেপ্তারের আগে আসলাম চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশের প্রতিটি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।

পেছনের ঘটনা
চাটগাঁর নেতা আসলাম চৌধুরীকে মাস খানেক আগে বিএনপির নয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব করেন চেয়ার পারসন খালেদা জিয়া।

অপরদিকে ইসরাইলের লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি দেশটির বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারা-এর সাবেক উপদেষ্টা। মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালান তিনি।

সম্প্রতি ভারতের এক সম্মেলনে আসলাম-মেন্দির সাক্ষাতের ছবি ও খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ তোলেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’। তবে আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে তাদের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেননি।

গ্রেপ্তারের আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা তিনি সে সময় জানতেন না। আর সাফাদিও বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে ‘কোনও গোপন বিষয়ে’ কথা হয়নি।

মেন্দি আসলাম সাক্ষাতে ষড়যন্ত্র ‘হয়েছি কি হয়নি’ এ নিয়ে দুপক্ষে বাদানুবাদের মধ্যেই ১৫ মে ঢাকার খিলক্ষেত থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়।

এদিকে, পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক মামলা হওয়ার দিন সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘চুক্তি করার কথা’ আসলাম জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’।

আইজিপি শহীদুল হক দাবি করেন, ইসরায়েলের সেই রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘সম্পর্ক আছে’ এবং তার সঙ্গে আসলাম চৌধুরী ‘একাধিক মিটিং’ করেছেন ভারতে।েইউজিপি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে সে যেসব তথ্য উপাত্ত দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে, সে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সস্পৃক্ত ছিল।”

‘নিজের ইচ্ছায় মেন্দির সঙ্গে বৈঠক করিনি’

এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা নাম উল্লেখ না করা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইতিমধ্যে আসলাম চৌধুরী সরকার পতন চেষ্টার ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু তথ্য ফাঁস করেছেন। সূত্র মতে, আসলাম চৌধুরী বলেছেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে নানামুখী চেষ্টা চলছে অনেকদিন ধরেই। এ ব্যাপারে ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদকে কাজে লাগাতেই মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করা হয়।”

জানা গেছে, ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ কানেকশনে শুধু বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীই নন, বিভিন্ন পেশার আরও বেশ কয়েক ব্যক্তি ফেঁসে যেতে পারেন। এর আগে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম এ রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সূত্র জানায়, রিমাণ্ডে থাকাকালে মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের একটি তালিকাও তিনি গোয়েন্দা পুলিশকে দিয়েছেন। ওই তালিকায় সনাতন ধর্মের বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে। সূত্র আরও বলেছে, আসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আসলাম চৌধুরীর সেলফোনে কারা ফোন করেছেন, তিনি কাদের ফোন করেছেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশের তদন্তকারী দল। আসলাম চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার একটি হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এসব ব্যাপারেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী বলেছেন, আমি নিজের ইচ্ছায় মোসাদের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করিনি। আমাকে বৈঠক করতে পাঠানো হয়। সূত্রের দাবি মতে, আসলাম চৌধুরী পুলিশের কাছে বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েক নেতার নামও বলেছেন। ওই নেতাদের বর্তমানে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে এজন্য খোঁজখবর রাখছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত