ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ব্রিটেনে পাকিস্তানিদের হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবাস বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৩:২৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

গ্রাফচিত্রে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বাংলাদেশিদের স্পষ্ট এগিয়ে থাকার প্রমাণ

গ্রাফচিত্রে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বাংলাদেশিদের স্পষ্ট এগিয়ে থাকার প্রমাণ

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামগ্রিক উন্নতির দিক থেকে দেশে-বিদেশে পাকিস্তানিদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলদেশিরা। পাকিস্তানের প্রভাবশালী মিডিয়া দ্য ডনের একটি প্রতিবেদনে একথা স্বীকার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানিদের অমন হতাশাজনক অবস্থানের জন্য প্রকারান্তরে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নীতি নির্ধারক ও আপামর পাকিস্তানিদের বাংলাদেশে থেকে শিক্ষা নিতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটেনে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, সেদেশে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে লেখাপড়ায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। এসবের বাইরে ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিবারভিত্তিক আয়-উপর্জনও একইদেশে বসবাসরত পাকিস্তানিদের ছাড়িয়ে গেছে এখন। যদিও একটা সময় বাংলাদেশিরা আয়রোজগার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের তুলনায় ছিল নগণ্য।

মুরতাজা হায়দার লিখিত ডনের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির বিবেচনায় মাত্র চার দশক সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দেশে এবং বিদেশে পাকিস্তানকে এখন শুধু পেছনেই ফেলেনি, সামনের দিনগুলোত আরও বিশাল সাফল্য অর্জন করতে যাচ্ছে।

পাকিস্তানের উন্নয়ন পেশাজীবী এবং রাজনীতিক নেতৃত্বকে এটা এখন মানতে হবে যে, একদা মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব দেশকে তারা প্রভাবিত করতো, উন্নয়নের দৌড়ে সেসব দেশই এখন পাকিস্তানকে হারিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে চার দশক আগে আফ্রো-এশিয়ার অনেক দেশ পাকিস্তানের পেছনে ছিল। গত শতাব্দীর ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে পাকিস্তান আলিঙ্গন করেছে ধর্ম প্রভাবিত জঙ্গিবাদকে আর অপরাপর দেশগুলো অনুসরণ করেছে উচ্চ শিক্ষা আর মুক্তবাজার অর্থনীতির উদারনৈতিক রাজনীতিকে।

ডনের ওই প্রতিবেদনে ইকোনমিস্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয় ব্রিটেনবাসী বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মাঝে ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও অবনতির ফারাকটাকে। ইকোনমিস্ট জানায়, বাংলাদেশি বাবা-মার সন্তানরা ব্রিটেনে লেখাপড়া-প্রতিভায় শুধু পাকিস্তানিদেরই পেছনে ফেলছে না, মূলধারার স্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, ব্রিটেনে শিক্ষা ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ে ৬১% বাংলাদেশি পাঁচটি সেরা জিসিএসই (অনুর্ধ ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের একটি সার্টিফিকেট) অর্জন করেছে। এই তুলনায় পাকিস্তানিদের মাত্র ৫১ শতাংশ তা পেয়েছে। আর ব্রিটিশ শিশুরা এক্ষেত্রে পেয়েছ ৫৬%, তাও বাংলাদেশিদের পেছনে রয়েছে তারা। বর্তমানে অংক ও বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ‘এ’ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাকিস্তানিদের থেকে এগিয়ে বাংলাদেশিরা। সংখ্যায় পাকিস্তানিদের তুলনায় কম হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো বাংলাদেশিদের বেশি।

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াওজুন লি’র এক গবেষণায় পরিষ্কার দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের হাউজহোল্ড ইনকাম পাকিস্তানিদের চেয়ে বেশি।

২০১১ সালের সর্বশেষ শুমারি মতে, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২০১ জন আর পাকিস্তানির সংখ্যা ১১ লাখ ২৫ হাজার প্রায়। তবে পকিস্তানিরা মোটা দাগে ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করে ১৯৬০ এর দশক থেকে যেখানে বাংলাদেশিরা শুরু করে ১৯৮০ দশক থেকে। ব্রেটেনবাসী বাংলাদেশিদের সিংহভাগ যায় সিলেট থেকে আর পাকিস্তানিদের বেশিরভাগ যায় দেশটির গ্রামীণ জনপদ হিসেবে খ্যাত মিরপুর থেকে।

যুক্তরাজ্যে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুটি দেশের বাসিন্দারা আছে প্রধানত দুটি আলাদা পেশায়। পাকিস্তানিরা ব্যাপকহারে আছে ট্যাক্সিক্যাব চালনা ও ব্যবসায় আর বাংলাদেশিরা আছে হোটেলের চাকরি আর ব্যবসায়।

তবে পাকিস্তানিরা শুরুর দিকে ব্রিটেনের টেক্সটাইল (বয়ন) শিল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজকর্ম শুরু করে। আর বাংলাদেশিরা যখন ব্যাপকভাবে ব্রিটেনগামী হয় তখন সেখানে বয়ন শিল্পের মরণকাল।

তবে এই অবস্থাটা অবশ্য বাংলাদেশিদের জন্য শাপে বর হিসেবে দেখা দেয়। উপযুক্ত কাজের সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত বাংলাদেশিরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় লন্ডন ও তার আশপাশের এলাকায় আবাস গাড়ে। সৌভাগ্যক্রমে ওইসব এলাকার স্কুলগুলো এবং শিক্ষকরা দেশটির উত্তরাঞ্চল যেখানে পাকিস্তানিরা আবাস গেড়েছিল- তার তুলনায় শ্রেয়তর। এর ফলে বাংলাদেশি শিশুরা লাভবান হয় শিক্ষা-দীক্ষায়।

লন্ডনের ব্রিকলেনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাংলাদেশি কমিউনিটি যোগাযোগ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পায়। একইসঙ্গে বাঙালিদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শক্তিও বাড়তে থাকে। পাকিস্তানিদের ক্ষেত্রে এই বাস্তবতা ছিল বিপরীতমুখী। তারা ব্রিটেনে থেকেছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এবং আধুনিক চিন্তা চেতনা ও যোগাযোগে ছিল পিছিয়ে।

বাংলাদেশিরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উন্নতমানের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে- মুরতাজার মতে এই সিদ্ধান্তটা তাদের সঠিক ছিল।

বাংলাদেশিরা ইতিবাচক আরেকটি কাজ করেছে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন আর যোগাযোগে তারা পাকিস্তানিদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এ তথ্য গবেষণায় প্রমাণিত।

বাংলাদেশিরা ব্রিটেনে কৌশলগতভাবে জ্ঞানসিদ্ধ অগ্রসর অর্থনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। ভেতরে-বাইরে তারা আধুনিক অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রগুলোকে কেন্দ্র করে নিজেদের বিচরণক্ষেত্র গড়ে তুলেছে। তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করছে ব্যাপক হারে।

প্রতিবেদনের লেখক কানাডাপ্রবাসী পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ মুর্তজা হায়দারের মতে, পাকিস্তানিদের উচিৎ বাংলাদেশিদের থেকে শিক্ষা নেওয়া। দেশে-বিশে বাংলাদেশিরা তাদের সন্তানদের উন্নত শিক্ষায় মনোযোগী হয়েছে যেখানে পাকিস্তানিরা পিছিয়ে আছে।
(প্রতিবেদনটি গত মার্চে প্রথম প্রকাশ পায়। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে এটি ফের প্রকাশ করে ডন.কম)

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত