ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ব্যাংককের চাট্টুচক: হাঁটতে হাঁটতেই জায়গাটিকে পছন্দ করে ফেলেছিলাম

আনিসুল কবির

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ৭ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৫:২৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬

আমি অনেক আগে থেকেই ট্র্যাভেল সম্পর্কিত চ্যানেলগুলোর পোকা। পৃথিবীর সব মহাদেশের অনেক দেশেই ঘোরা হয়ে গেছে। ভার্চুয়ালি। টিভিতে দেখে দেখে। আর এখন বলতে পারি সব দেশের খাবারের চেহারাটা অন্তত দেখা হয়ে গেছে।স্ট্রিট ফুডের টিভি প্রোগামগুলো দেখে দেখে।

টিভিতে দেখা কোনো কোনো খাবারের প্রতি একটা বাড়তি আকর্ষণ বোধ করেছি। মনে হয়েছে, আহ যদি ঐদেশে বসে ঐ খাবারটা খাওয়া যেত! এমন একটি খাবার স্পেনের পায়েল্লা (Paella)। খিচুড়ি টাইপের খাবার। অল্প আঁচে গোল চেপ্টা বাসনে মুরগীর মাংশ, চিংড়ি, ঝিনুক, অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার, সব্জি এবং চাল দিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়। পায়েল্লাকে স্পেনের জাতীয় খাবার বলা হয়। এটি মুলত ভ্যালেন্সিয়া এলাকার খাবার।

আমার মনের আশা কিছুটা পুরণ হয়েছিলো এবার থাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে। ব্যাংকক শহরের সুকুম্বির ‘নানা’ স্টেশন থেকে স্কাই ট্রেনে করে মোচিট স্টেশনে নেমে সামান্য হাঁটলেই চাট্টুচক নামে একটি মার্কেট এলাকা আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভ্রমণবিলাসী মানুষের প্রিয় জায়গা এটি।

ব্যাংককের অনেক জায়গার মধ্যে চাট্টুচক নানা দেশের নানা বর্ণের মানুষের ঘোরাঘুরির জন্য সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। এখানে হাঁটার সময় বিদেশিদের কাছে অনেক আপন লাগার কারণ এখানে পৃথিবীর সব দেশের না হলেও প্রায় সব সংস্কৃতির খাবার দোকান দেখা যায়। চাট্টুচক মার্কেটের রাস্তায় অসংখ্য খাবার দোকান। যেন স্ট্রিট ফুডের স্বর্গ্য রাজ্য।

আমি যেদিন চাট্টুচকের রাস্তায় হব্বে তব্বে মুডে হাঁটছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিলো জায়গাটির সঙ্গে আমাদের বঙ্গবাজারের কিঞ্চিৎ মিল আছে, বিশেষত জামাকাপড়ের দোকানের দিক থেকে। তবে জায়গাটি অনেক বিস্তৃত, বৈচিত্রপূর্ণ। । খাবারের দোকানের ভিড়ে টিভিতে দেখা অনেক দেশের বিখ্যাত খাবারগুলো দেখে

এতোদিনের মনের ইচ্ছা পুরণ করার সুযোগ পাওয়া গেলো। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো স্পেনিশ খাবার পায়েল্লা খাবো।

বার্সিলোনা বা ভ্যালেন্সিয়ার কোনো ক্যাফেতে বসে সদ্য রান্না করা পায়েল্লা খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ না হলেও স্পেনিশ শেফের তৈরি পায়েল্লা খাওয়া হয়ে গেলো থাইল্যান্ডে বসে।

টিএলসি এবং ফক্স টিভিতে থ্যাইল্যান্ড ভ্রমণের অনেক ট্রাভেল শো দেখেছি। সেসব অনুষ্ঠানের উপস্থাপক চাট্টুচক অংশ ভ্রমণের সময় একজন মজার শেফের কাণ্ডকীর্তি দেখায়। শেফের নাম ফার্নান্দো। স্পেনিশ স্ট্রিটফুডের দোকানের পায়েল্লা শেফ।

শেফ ফার্নান্দোর পায়েল্লা রান্না দেখাও আকর্ষণীও বিষয়। কারণ রান্নার সময় সে নাচ গান ও বিভিন্ন প্রকার মজার মজার মুখভঙ্গি করে যা পর্যটকদের আনন্দের খোরাক যোগায়। শেফ ফার্নান্দো পর্যটকদের সঙ্গে ছবি, ভিডিও এবং সেলফি তোলা চালাতে থাকেন রান্নার ফাঁকে ফাঁকে।

ঘটনাক্রমে এবং আমার সৌভাগ্য যে টিভিতে দেখা এই শেফকে দেখা, তার সাথে সেলফি তোলা এবং তার সদ্য রান্না করা পায়েল্লা খাবার সুযোগ পেয়ে গেলাম। শেফ ফার্নান্দোর চাট্টুচকের ক্যাফের সঙ্গে স্পেনে অবস্থিত ক্যাফেগুলোর তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অথচ এখানের এক প্লেট পায়েল্লা মাত্র ৫০ বাথ (থাইল্যান্ডের মুদ্রা), অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১৫০টাকা বা কিছু কম। মুরগির মাংস, চিংড়ি মাছ এবং ঝিনুক দিয়ে রান্না করা খিচুড়ির মতো লাগলো খেতে। যদিও আমি ঝিনুক ও চিংড়ি খাইনি।

মাত্র ১৫০ টাকায় আমার অনেক দিনের স্বপ্নটি যেন সত্যি হয়ে পড়লো। সেফ ফার্নান্দোর পায়েল্লা রান্না দেখে, ছবি তুলে এবং ভিডিও করে এক প্লেট পায়েল্লা কিনে খেতে খেতে মনে হলো ফার্নান্দোর দোকানটি যেন ব্যাংককে এক টুকরা স্পেন।

কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে ব্যংকক। ব্যংককে ট্রেনে, বাসে বা ট্যাক্সিতে চাট্টুচক।

আনিসুল কবির: শখের পর্যটক

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

লাইফস্টাইল বিভাগের সর্বাধিক পঠিত