ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হোক পহেলা বৈশাখকে

মো. জিয়াউল হক হাওলাদার

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৩:১১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মো. জিয়াউল হক হাওলাদার, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তা

মো. জিয়াউল হক হাওলাদার, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তা

বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের ঐতিহ্য, হৃদয়ের মিলনমেলা। এ ঐতিহ্যকে ধারণ করে বাঙালি পুরো বিশ্বকে তাক লাগায় ভীষণ গৌরবে আর অহঙ্কারে। এটি শুধু বাংলাদেশের একটি জাতীয় দিবস নয়, উপ-অঞ্চলের সর্বজনীন জাতীয় দিবসও বটে। পশ্চিম বাংলা এবং আসামেও এ দিবসটি পালিত হয়। এ উৎসবের দিন, ধর্ম, বর্ণ, বিত্ত, বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। পৃথিবীর খুব কম দেশই এ ধরনের সর্বজনীন উৎসবের অধিকারী।

বাংলা নববর্ষ হচ্ছে আমাদের জাতীয় ঐক্যের এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির। এ দিবসটি আমাদের বাঙালি চেতনার শতভাগ প্রতিফলিত রূপ। বাঙালির সত্যিকারের বাঙালিত্ব খুঁজতে হলে বাংলা নববর্ষের দিকে তাকাতে হবে। এ দিবসটির স্বতন্ত্রময় বৈশিষ্ট্যের জন্য ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যের (ইনটেনজিবল) তালিকায় স্থান পেতে পারে, যেমনটি পেয়েছে আমাদের লালনসংগীত।

বাংলা নববর্ষ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালনের জন্য সরকার তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতকরা ২০ ভাগ বোনাস প্রদান এ বছর থেকে চালু করেছে। অর্থাৎ এ দিবসের গুরুত্ব দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নববর্ষের দিন আমরা বিজাতীয় পোশাক ছেড়ে আমাদের বাঙালির জাতীয় পোশাকের দিকে নজর দিই। ছেলেরা রঙিন পাঞ্জাবি, মেয়েরা রঙবেরঙের শাড়ি ইত্যাদি পরিধান করে হাজির হয় মিলনমেলায়Ñ রমনা বটমূল এবং টিএসসিতে। ছোট বাচ্চারাও হাজির হয় বাবা-মায়ের হাত ধরে কিংবা কোলে চড়ে। ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত, ব্যবসায়ী-চাকুরে-দিনমজুর সবাই একসঙ্গে বাংলা নববর্ষ পালন করে। এ দিবসের তাৎপর্য এত বেশি গভীর এবং ব্যাপক, যা আমাদের জাতীয় চেতনার ঐক্যের মূর্ত প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়।

নববর্ষের যে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের করা হয় তার তাৎপর্য অনেক বেশি। লাখ লাখ জনতা এতে অংশগ্রহণ করে। এ মঙ্গল শোভাযাত্রাটি কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন, দেশপ্রেমের অনুভূতি। শোভাযাত্রার মূল কথা হচ্ছে, দেশ ও জাতির শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করা। এ শোভাযাত্রায় সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করে জাতীয় ঐক্যের চেতনা থেকে।

বাঙালিয়ানা এবং বাঙালির সঠিক রূপ-রঙ অবলোকন এবং এর রস আস্বাদনের জন্য অনেক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণে আসেন। বাংলাদেশে বসবাসরত অনেক বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের জাতীয় পোশাক পরে রমনা বটমূল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সবার সঙ্গে শামিল হন। আমাদের আনন্দ এবং উচ্ছ্বাসকে তারাও ভাগাভাগি করে নেন। তারা আমাদের সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করেন।
বাংলা নববর্ষ পর্যটন শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এ দিবসটিকে বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার জন্য অনেক ট্যুর অপারেটর প্যাকেজ বিক্রি করে। বাঙালিয়ানা সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখের খাবার পান্তা-ইলিশ, কাঁচামরিচ, আলুভর্তা এবং দিনব্যাপী লোকজ সংস্কৃতির উৎসবকে ঘিরে বিদেশি পর্যটকদের কাছে প্যাকেজ বিক্রি করে। বিদেশি পর্যটকদের কাছে এ দিবসটি অত্যন্ত কদরের, কারণ এ ধরনের রঙের ঢেউ এবং উদ্ভাসিত লাখো মানুষের ঢল পৃথিবীর অন্যদেশে দেখা যায় না। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশের নিজস্ব দিবস আছে; কিন্তু এত রঙের মাতোয়ারা, এত উচ্ছ্বাস আর কোথাও দেখা যায় না। একদিনের এ দিবস; কিন্তু এর প্রভাব এবং রেশ থেকে যায় অনেক দিন। একটি দিনের আয়োজন শুরু হয় অনেক দিন আগে থেকেই।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশেই অনেক ধরনের বৈশাখী মেলা বসে। মেলায় মুড়ি, মুড়কি, খই, চিঁড়া, কদমা, বাতাসা এবং বিভিন্ন ধরনের মুড়ালি বিক্রি হয়, যা দেখে আমাদের লোভ সামাল দেয়া যায় না। মেলায় ঐতিহ্যবাহী খেলা এবং বিনোদন আয়োজন দেখা যায়, যেমনÑ নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা, পুতুলনাচ, কুস্তি, হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট ইত্যাদি। এগুলো পর্যটকদের জন্য দারুণ উপভোগ্য বিষয়।

পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে যে গান গাওয়া হয় তা বাঙালি জাতির নতুনকে বরণ করে নেয়ার সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক, পুরনো দুঃখ-গ্লানি ভুলে যাওয়ার বীরত্বের প্রতীক। হাজার বছরের আমাদের যে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য আছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাঙালি জাতি হচ্ছে শত প্রতিকূলতার বিপরীতে ঘুরে দাঁড়ানোর জাতি। শত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও বাঙালি প্রাণ খুলে হাসতে জানে, অতিথিদের বরণ করে নিতে জানে।

এসব কিছু দেখে বিদেশি পর্যটকরা অবাক হন। তাই আমাদের বাংলা নববর্ষকে ইউনেস্কো একটি বিশ্বঐতিহ্য (ইনটেনজিবল) ঘোষণা করতে পারে। এজন্য বাংলাদেশকে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের অনুপম, স্বতন্ত্র, বিশেষ বৈশিষ্ট্যম-িত উৎসব পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অতএব এ দিবসটি ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যের খাতায় স্থান পেতে পারে। বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ এর এটি হোক আমাদের দাবি।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

 

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত