ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

বিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হুমকি হয়ে উঠছে

বিজ্ঞান ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০৮, ৫ মার্চ ২০১৭  

বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial intelligence এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে তা মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। বিষয়টি এখনও উদ্বেগজনক না হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার যে হারে ঘটছে তাতে কিছু বিজ্ঞানী এখনই আতঙ্কবোধ করছেন।

সেকারণেই সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত শুক্রবারের ওই বৈঠকে বিজ্ঞানীরা তথ্য প্রযুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন। Great Debate: The Future of Artificial Intelligence শীর্ষক বৈঠকে বিজ্ঞানীরা বলেন, যে কোনো নতুন প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন এখন সাধারণ ব্যাপার। অথবা বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন ছাড়া সেসব প্রযুক্তি ব্যবহার কল্পনা করা যায় না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন কী আমাদের ভবিষ্যত সঙ্কটাপন্ন করে তুলছে না?

ধরা যাক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ভূয়া পোষ্টের কারণে কোনো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া এখন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তথ্য প্রযুক্তির অধিকাংশই এখন Artificial Intelligence দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে মানব সভ্যতার পরিণতি কী হতে পারে?

মানুষ আকৃতির রোবট নির্মাণে বিজ্ঞানীরা এখনও অগ্রসর না হলেও অনেক ভারি কাজই চলে যন্ত্রের মাধ্যমে। যার বেশিরভাগই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মানুষের শ্রমের পরিমাণ এবং ঝুঁকি কমাতে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত তাই বের করছেন নতুন নতুন প্রযু্ক্তি। এর যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনই রয়েছে মন্দ দিকও।

আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বৈঠকে এমন সব বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী এবং তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন যে বিষয়টির গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোসফট ল্যাবের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এরিক হরভিটজ, স্কাইপি’র সহ প্রতিষ্ঠাতা জেন টিলিন, বিখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউসসহ অন্তত ৪০ বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিধিনিরা। যাদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও কৌশল প্রণেতারাও ছিলেন।     

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা আশঙ্কা জানিয়ে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের তথ্য এখন প্রযু্ক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংরক্ষণ করছে। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বিজ্ঞানীরা এতটাই উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে তা অকল্পনীয়। শুধু স্মার্ট ফোনের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝবেন, এমন কিছু সফটওয়্যার সেখানে রয়েছে যা মানুষের প্রয়োজন বুঝে তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের মন বোঝার ক্ষেত্রেও তা কাজ করছে।

শুধু তাই নয়, শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক বড় বড় কর্মকাণ্ড এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এখতিয়ারে। অনেক ভারি অস্ত্র আছে যা সম্পূর্ণ প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এমনকি পরমাণু বোমাও মানুষ এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই ধারা এতটাই বেগবান যে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে তা কোন পর্যায়ে পৌঁছবে ধারণা করা মুশকিল।

ভয়টা হচ্ছে, মানুষের কল্যাণে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে জড়িয়ে গিয়েছে তাতে কোনো একসময় সেটি বিপরীত অবস্থান নিতে পারে। অথবা যদি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে। এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

আর যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সত্যিই মানুষের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে তবে মানব জাতি ধ্বংস হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। কাজেই Artificial intelligence কে কিভাবে আরও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায় তাই নিয়ে বিজ্ঞানীরা আলোচনা করেন। আর ভয়াবহ পরিস্থিতি যদি সত্যিই দেখা দেয় তবে তা ঠেকাতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলেও মত দেন বৈঠকে উপস্থিত বিজ্ঞানীরা।

নিউজওয়ান২৪.কম

মোবাইল-পিসি-টেক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত