ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

পাকিস্তানের প্রতি রুশ ‘পরকীয়ায়’ অস্বস্তিতে ভারত!

বটতলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১২:৩৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

একটি সম্মেলনে পাশাপাশি আসনে মোদি ও পুতিন                  -ফাইল ফটো

একটি সম্মেলনে পাশাপাশি আসনে মোদি ও পুতিন -ফাইল ফটো

রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সম্প্রীতি ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। যেমন, প্রথমদিকে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্প বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি রাশিয়া। এ নিয়ে তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে মস্কো হতাশ করতে যাচ্ছে দিল্লিকে।

তারা সিপিইসিতে সমর্থন তো দিচ্ছেই এমনকি এই প্রকল্পকে তাদের ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন প্রজেক্টের সঙ্গে সংযুক্ত করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে।

বিষয়টি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন ভারত চাইছে ‘জঙ্গিবাদে সমর্থনের’ ইস্যুকে সামনে এনে তার চির বৈরি প্রতিবেশী পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে করে ফেলতে। এমন অবস্থায় নিজের বারবারের পরিক্ষীত মিত্রের এই ‘পরকীয়াসুলভ’ আচরণ স্বভাবতই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দিল্লির হর্তাকর্তাদের কপালে।

সিপিইসি রুট পাকিস্তানের অশান্ত প্রদেশ বালুচিস্তানের গোয়াদার ও চীনের জিনজিয়াংকে সংযুক্ত করবে। এই মহাসড়ক প্রকল্পটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের গিলগিট-বাল্টিস্তান এলাকা দিয়ে গিয়েছে- এটাও ভারতের জন্য বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ। ওই এলাকার অধিকার নিয়ে ভারতের আপত্তি রয়েছে।

সম্প্রতি চীনা রাষ্ট্রপতি শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিপিইসি প্রসঙ্গে দিল্লির অসন্তোষের কথা জানান। তবে তাতে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি বেইজিং।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে পাকিস্তানি মিডিয়া জানায় সিপিইসিতে রাশিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ খবর প্রকাশের পর মস্কো তাকে অসত্য বলে খারিজ করে দেয়। কিন্তু এখন পাকিস্তানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সি দেদোভ বলছেন, রাশিয়া ও পাকিস্তান সিপিইসিকে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন প্রজেক্টের সঙ্গে সংযুক্ত করানোর ব্যাপারে কথাবার্তা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সিপিইসিকে রাশিয়া শক্তভাবে সমর্থন করছে। কারণ, এটা শুধু পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্যই জরুরি না- আঞ্চলিক সম্পর্কোন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে।

বিশিষ্ট কূটনীতি বিশ্লেষক ব্রহ্মা চিল্লানি এ প্রসঙ্গে বলেন, রাশিয়া থেকে পাওয়া এই যৌগিক সঙ্গেত ভবিষ্যতে রুশ-ভারত সম্পর্ককে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে। মনে হচ্ছে রাশিয়া এখন আর ভারতকে তার বিশ্বস্ত বন্ধু বা পার্টনার হিসেবে বিবেচনা করছে না।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন শারতাজ আজিজ দিল্লিতে: ভারত-পাকিস্তান মধ্যস্ততায় ইরানের প্রস্তাব

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে দুনিয়াজুড়ে খ্যাত রুশ-ভারত মৈত্রীর অসংখ্য নজির রয়েছে। এর একটি চূড়ান্ত রূপ দেখা গিয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে। তখন ভারতের উৎসাহেই সোভিয়েত রাশিয়া তার নৌবহর সজাগ করে তোলে উপমহাদেশের দিকে আসার জন্য। এর ফলেই মার্কিন নবম নৌবহরের বঙ্গোপসাগর এলাকায় আসা থমকে গিয়েছিল। যা ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ত্বরান্বিত করেছিল।

এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লি এখনো বলছে যে মস্কোর সঙ্গে তাদের সম্পর্কে কোনো ‘ছন্দপতন’ ঘটেনি। তবে পর্দার আড়ালে তারা মস্কোকে বারবার একথাই বোঝাতে বোঝাতে চাইছে যে ইসলামাবাদই হচ্ছে অত্র অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক।

তবে এর আগেও রুশ ‘ছলনার শরে’ একাধিকবার ‘আহত’ হয়েছে ভারত। সর্বশেষ উরিতে ভারতীয় সেনানিবাসে সন্ত্রাসী হামলার পর রাশিয়া-পাকিস্তান যৌথ সামরিক মহড়া ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ওই হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তখন মস্কো ওই সামরিক মহড়ার পেছনে যুক্তি দেখিয়েছিল যে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে সহায়তা করা। এছাড়া ভারতের গোয়াতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লশকর-এ-তৈয়বা বা জয়েশ-এ-মোহাম্মদের মতো সংগঠনের নাম সরাসরি উল্লেখ করেনি মস্কো। এটা ছিল ভারতের জন্য একটা অচিন্তনীয় ধাক্কা।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন নীল বোরকায় ‘সবুজ নয়না আফগান বালিকাকে’ পাঠানো হলো নিজদেশে

তবে সব ছাপিয়ে রাশিয়া বলে আসছে যে পাকিস্তানের সঙ্গে তার ঘনায়মান সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ত্যাগের বিনিময়ে হবে না। কিন্তু একথায় মনে হয় না ভারত নিশ্চিন্ত হতে পেরেছে। কারণ, ম্যাকিয়াভেলিজম তত্ত্ব (উদেশ্য সাধনের জন্য সকল কর্মপন্থাই বৈধ) প্রভাবিত চলমান বিশ্বে আপন-অন্ধ-স্বার্থটাই বড় কথা, যোগফল শূন্য হলে বাকী সবই ‘অচল পয়সা’। আর তাই মস্কোর সাম্প্রতিক আচরণে ভারত রয়েছে উদ্বেগপূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দিন দিন নয়া মাত্রা পাচ্ছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত