ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

নাইট গার্ডের কন্যার ঢাবি যাত্রার অসাধারণ গল্প

আসিফ কাজল

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২১ জুলাই ২০১৮  

হতদরিদ্র নাইট গার্ড পিতা মিজানুর রহমানের স্বপ্ন মেয়ে পড়ালেখা করে শিক্ষক হবেন। দৃষ্টিহীন তৃষ্ণার ঢাবি জয়ের গল্প এখন এলাকায় অনেকটা রূপকথার মতো।

এই জেলার শৈলকুপা উপজেলার ব্রাহিমপুর গ্রামের হতদরিদ্র মিজানুর রহমানের প্রথম সন্তান সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা। পিতা মিজানুর শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ বাজারের হান্নান ফিলিং স্টেশনে মাসিক ৫ হাজার টাকার বেতনে চাকরি করেন নৈশ প্রহরী হিসেবে। এই টাকায় তার সংসার চলে না। অতি কষ্টে মেয়েকে পড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে। পিতার ভাষ্যমতে, ২০০৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করেন তৃষ্ণা। রংপুর, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ ঢাকা ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসাও ধরে রাখতে পারেনি তৃষ্ণার চোখের আলো।

ওই বছরের শেষের দিকে তার দুই চোখের আলো নিভে যায়। দৃষ্টি হারানোর পর কখনো একা একা পড়ার সক্ষমতা হয়নি। কিন্তু একটুও মনোবল হারাননি। ওই অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মিশনারিজ স্কুলে। কৃতিত্বের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করার পর ভর্তি বেগম বদরুন্নেছা মহিলা কলেজে। সেখান থেকে পাশ করে ভর্তি হন ঢাবিতে।

অপ্রত্যিাশিত দুর্যোগের কাছে হার না মানা তৃষ্ণা জানান, শিক্ষকদের লেকচার রেকর্ড করে তাকে পড়তে হয়েছে। এখন লেখাপড়া ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য একটি ল্যাপটপ দরকার, কিন্তু সে সামর্থ নেই। তিনি বলেন, আমি ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষার দ্বায়িত্ব নিতে চাই।

একইভাবে লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে একজন ভালো শিক্ষকও হতে চান। পিতা মিজানুর রহমান বলেন, নিজের ২ বিঘা জমি বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু চোখ ভালো হয়নি। এখন অনেক কষ্টে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। সমাজের বিত্তবানরা যদি তার লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নিতেন তাহলে তার স্বপ্ন পুরণ হতো।

বিষয়টি জানার পর ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, মেধাবী তৃষ্ণার লেখাপড়ার জন্য জেলা প্রশাসন সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতা করবে। আমরা আশা করি সে লেখাপড়া শেষ করে একজন স্বাবলম্বী ও ভালো মানুষ হিসেবে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারবে।

তৃষ্ণাকে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক সহৃদয় ব্যক্তিরা যোগাযোগ করতে পারেন তার পিতার ০১৭০৮৩২৬৫৯২ ও তার সেল নম্বরে ০১৮৮৪৩৭৭০০৭।

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত