ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘দ্য ক্রো ইজ হোয়াইট, বেঙ্গল ইজ পাকিস্তান’- প্রথম পর্ব

তাহির মেহদি, পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০০:২৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ২৩:৪৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

[বাংলাদেশ সম্পর্কে গড়পড়তা পাকিস্তানিরা কী ভাবে? আমাদেরকে তারা কোন নজরে দেখে বা মূল্যায়ন করে? এর সহজ উত্তর— দু’একটি ব্যতিক্রম এবং বুদ্ধিজীবী মহলে ৭১’র ঘটনাবলী নিয়ে সত্যভাষণের কিছু চেষ্টা ছাড়া বাংলাদেশি তথা বাঙালিদের ব্যাপারে তারা নেতিবাচক ধারণায় তাড়িত। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন.কম এর ভাষায়— “পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের চোখের দিকে তাকাতে রাজি নয়। তারা ১৯৭১ সালের ঘটনাবলীর খুবই খেলো ধরনের এক গল্প-গাথার আড়ালে নিজেদের লুকোতে চায়, যে গল্পে সেই ঘটনাকে (১৯৭১) স্রেফ ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই বোঝানো হয়েছে। খুব ভাল হতো যদি একত্রে থাকা যেত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে ষড়যন্ত্র করেছিল কার বিরুদ্ধে? বাঙালিদের করার-ই বা কী ছিল তখন? কীভাবে তারা বিচ্ছিন্নতার মোড়ে পৌঁছালো?”

ওপরের কথাগুলো ডন বলেছে সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত ‘দ্য ক্রো ইজ হোয়াইট, বেঙ্গল ইজ পাকিস্তান’ শিরোনামের একটি লেখায়। তাহির মেহদি রচিত ৪ পর্বের ওই লেখায় বাংলাদেশ তথা বাঙালিকে ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। দু’একটি বিচ্যুতি ছাড়া বাংলাদেশ সম্পর্কে গড়পড়তা পাকিস্তানি মূল্যায়নের ব্যতিক্রম এ লেখাটি। আমাদের এখানে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক মহলটি ’৭১-এ তাদের ভূমিকায় দোষ স্বীকার করতে না চাইলেও এ লেখায় একজন পাকিস্তানি হিসেবে লেখক ’৭১ ও এর আগের সব নেতিবাচক ঘটনাবলীর জন্য প্রকারান্তরে প্রায় সব দায়ই পশ্চিম পাকিস্তানিদের বলে মেনে নিয়েছেন। আগ্রহোদ্দীপক এ লেখাটির প্রথম পর্বের ভাষান্তর লেখকের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশি পাঠকদের জন্য উপসস্থাপন করা হলো। বাকি পর্বগুলো ধারাবাহিকভাবে যাবে]

কাব্যে অতিরঞ্জন অনুমোদিত, ব্যবসায়ে অসততাও সহনীয়— তবে এসবেরও একটা সীমারেখা আছে। আপনি কালো একটি কাককে কখনো সাদা বলতে পারেন না। কিন্তু রাজনীতির মঞ্চে আসুন— এখানে সব অসম্ভবই সম্ভব হতে পারে।

এখানে এমনকি ‘বিচার’-এর সমার্থক শব্দ হিসেবে ‘অবিচার’কে দাঁড় করিয়ে দেয়া যায় অথবা কমপক্ষে ‘সমতা’ শব্দটির ব্যবহারে সহজেই ‘অসমতা’কে ঢেকে দেওয়া যায়। যদি আপনারা ভেবে থাকেন আমি অতিরঞ্জন করছি— তাহলে বলবো আমাদের দেশের অতীত ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুণর্ভ্রমণ করে আসতে।

১৯৪৭ সালে যেসব এলাকা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, সেসব এলাকা আগে পৃথক পৃথক রীতি-কায়দায় শাসন করতো বৃটিশরা। বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধু আর পাখতুনওয়া (ত‍ৎকালীন এনডব্লিউএফপি অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রদেশ) ছিল নির্বাচিত গণপরিষদ শাসিত প্রদেশ। বালুচিস্তান শাসিত হতো একজন অ্যাপয়েন্টেড কমিশনারের দ্বারা, উপজাতীয় এলাকাগুলো রাজনৈতিক প্রতিনিধির দ্বারা। আর এর বাইরে ছিল বেশকিছু বৃটিশ অনুগত ‘রাজা’ শাসিত অঞ্চল যেগুলোকে বলা হতো প্রিন্সলি স্টেট্‌স। আকারে এই রাজ্যগুলো ক্ষুদ্র থেকে বৃহ‍ৎ সব পদেরই ছিল। এএমবি নামের রাজ্যটি এতই ক্ষুদ্র ছিল যে ১৯৭০-এ দেওয়া টারবেলা বাঁধের ফলে সৃষ্ট হ্রদে তলিয়ে যায় এটি।

আর বাহাওয়ালপুর রাজ্যটি ছিল বৃহত্তম প্রিন্সলি স্টেটগুলোর অন্যতম। বৃটিশ-ভারতের সেই রাজ্যটির এলাকায় এখন পাকিস্তানি পাঞ্জাবের ৩টি বিশাল জেলার অবস্থান। বালুচ রাজ্যটি ছিল জনবিরল আর এর বিপরীতে পাঞ্জাব ছিল জনবহুল।

তবে ভিত্তিমূল যতই অনুন্নত-অবিকশিত থাকুক না কেন, তাদের পরিচয়টা ছিল ‘রাজ্য’ হিসেবে।

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নবগঠিত দেশটির শাসনভার যাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়, তাদের জন্য ইতি-কর্তব্য ছিল দেশটির সবগুলো অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান আর সামনে এগিয়ে চলার একটি লাগসই পদ্ধতি নির্ধারণ করা। শাসকশ্রেণি একত্রে বসেওছিল এবং ভাবনা-চিন্তাও করেছিল বিষয়টি নিয়ে কিন্তু এর মাধ্যমে যে পথ তারা বেছে নেয় আর যেভাবে তারা রাষ্ট্র-ক্ষমতাকে ভাগাভাগি করলো তাতে করে বিষয়টি এক ভয়বহ সমীকরণে এসে পড়ে।

পাকিস্তানের বাদবাকি অঞ্চলের মোট জনগোষ্ঠীর তুলনায় বাঙালিরা ছিল সংখ্যায় বেশি। এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় বাঙালিদের এমন কোনো বাধা ছিল না যা নবগঠিত রাষ্ট্রে ক্ষমতার একটি বৃহ‍ৎ অংশের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করতে পারে।

কিন্তু এ অবস্থাটা ছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তাদের ইচ্ছা ছিল ইসলামী পুনঃর্জাগরণের ধ্বজাধারী হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আর সব শিখর শীর্ষে পাকিস্তানি ঝাণ্ডা তুলে ধরা। কিন্তু নিজের হিন্দু দেশিভাইদের সঙ্গে একই ভাষা-সংস্কৃতির অনুসারী কৃষ্ণকায়া বাঙালিরা পাকিস্তানি শাসকদের প্রবলভাবে কাঙ্খিত ওই পরিকল্পনার ছক পূরণে প্রস্তুত ছিল না।

এদিকে, শাসকগোষ্ঠীর অভীষ্ট ওই কীর্তি সাধনে একমাত্র যোগ্যতাধারীরা ছিলেন দেশত্যাগ করে ভারত থেকে আসা ব্লু-ব্লাডেড অভিজাত মুসলিমরা। আর তাদের সঙ্গী ছিল অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দ্বিতীয় সারির অল্পকিছু তপ্লীবাহক আর বাদবাকীরা ছিল মাঠপর্যায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী পদাতিকের ভূমিকায়।

সুতরাং, এটা ছিল আমাদের দেশের সামনে প্রথম এক দ্বিধাদ্বন্ধমুখর সিদ্ধান্তের ক্ষণ— এখানে যদি ন্যায্য গণতান্তিক পন্থা অনুসরণ করতাম, সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের হারানো সব গৌরব পুনরুদ্ধারের স্বর্ণালী সুযোগটি হাতছাড়া করতাম (বাঙালি সংখ্যাগুরুর কাছে শাসনক্ষমতা হারানোর মাধ্যমে)।

আর যদি আমাদের সযতনে লালিত স্বপ্নসিদ্ধির পথে স্থির থাকতে চাই, সেক্ষেত্রে ‘বাংলা সমস্যা’ থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে গণতন্ত্রের শিখণ্ডি সামনে রেখে অগণতান্ত্রিক একটি সমাধান খুঁজতে হবে। যাহোক, এ ধরনের একটি পথ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। ক্ষমতাসীন অভিজাতরা একের পর এক ডিক্রি (অধ্যাদেশ), অতীত সূত্র আর উল্লেখযোগ্য উক্তির এক বিশাল ভাণ্ডার খুঁজে পেলেন যেন।

আমাদের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা গণতন্ত্রের কানাগলির ভীতি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে দেন যেখানে কারও আভিজাত্য আর মর্যাদার নিরীখে তাকে আলাদা বিচার না করে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা হয়।

১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন প্রথমবারের মতো কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে সংবিধানের খসরা (বেসিক প্রিন্সিপল কমিটির তৈরি অস্থায়ী প্রতিবেদন) পেশ করা হলো— তাতে প্রস্তাব করা হয় নির্বাচিত দু’টি আইনসভার। এর একটি হলো হাউস অব ইউনিট্‌স (প্রাদেশিক পরিষদ), অপরটি হাউস অব পিপল (গণ পরিষদ)।

তবে আইন পরিষদে প্রদেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব (যার প্রতিনিধিরা সবাই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন) কোন হিসাবে হবে সে ব্যাপারে কোনো দিক নির্দেশনা দেয়নি। এটা অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল।

বাঙালিদের অর্ধেক আসন প্রস্তাব করা হলো যেখানে জনসংখ্যার বিচারে তাদের আরো বেশি আসন পাওয়ার কথা। এ অবস্থায় তারা তাদের অধিকার সমর্পণে প্রস্তুত ছিল না, সুতরাং অচলাবস্থার সূত্রপাত হলো।

প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন যাহোক পরিষ্কার একটি প্রস্তাব উপস্থাপনে সক্ষম হলেন। বেসিক প্রিন্সিপল কমিটির পর দ্বিতীয় খসরা উপস্থাপন করেন তিনি। এতে হাউজ অব ইউনিটে রাখা হয় ১২০টি আসন আর হাউস অব পিপলে রাখা হয় ৪০০ আসন।

উভয় হাউসের অর্ধেক করে আসন দেয়া হয় বাংলাকে আর বাকি দুই অর্ধাংশ পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকিস্তানের ৯টি ইউনিটকে (পাঞ্জাবের প্রদেশসমূহ, সিন্ধু, এনডব্লিউএফপি যা বর্তমানে FATA অর্থাৎ ফেডারালি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস নামে পরিচিত, বাহাওয়ালপুর, বালুচিস্তান, বালুচিস্তান স্টেট্‌স, খায়েরপুর স্টেট, ফেডারেল ক্যাপিটাল) তাদের জনসংখ্যার মোটামুটি অনুপাতে ভাগ করে দেয়া হয়।

একই নীতি অর্থা‍ৎ জনসংখ্যার অনুপাত অনুসারে আসন সংখ্যার বন্টন কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে করা হয়নি। এই পরিষ্কার অসাম্য আর অবিচারের কাজটির নাম দেওয়া হয় ‘সাম্যের নীতি’। এভাবেই এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলো: দু’টি আলাদা অংশ নিয়ে গঠিত পাকিস্তান যার একটি হচ্ছে পুর্ব বাংলাকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিমের নয়টি ইউনিট নিয়ে গঠিত পশ্চিম পাকিস্তান এবং এর দুটি অংশই অবশ্যই সমান সমান প্রতিনিধিত্ব করবে আইনসভায়। এই সমতায় বাঙালিরা অধঃনমিত হতে চাইলো না এবং ওই খসরা প্রত্যাখ্যাত হলো।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বোগরা (বগুড়ার মোহাম্মদ আলী) তার গাণিতিক কুশলতায় অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে তার উপস্থাপিত সংবিধানের তৃতীয় খসরায় পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকিস্তানের ৯টি ইউনিটকে চারটি দলে গ্রন্থিত করলেন আর পঞ্চম ইউনিট করা হলো বাংলাকে এবং প্রত্যেকটি ইউনিটকে হাউজ অব ইউনিট-এ সমান সংখ্যক আসন দিলেন (১০টি করে)। এর বিপরীতে হাউজ অব পিপলের ৩০০ আসন ভাগাভাগি করা হলো প্রতিটি ইউনিটের মোটামুটি জনসংখ্যানুপাতে। এতে ৩০০ আসনের আইনসভায় পূর্ব বাংলা ১৬৫ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল সত্যি কিন্তু হাউস অব পিপলে তা হলো না কারণ সেখানে মোট ৫০ আসনের মধ্যে তার ভাগে পড়ে মাত্র ১০ আসন।

খসরা মোতাবেক, দেশের সব ধরনের আইন দু’টি হাউসের অনুমোদিত হতে হবে এবং যৌথসভায় (৩৫০ সদস্য) আলোচনার মাধ্যমে। এ খসরায় পূর্ব বঙ্গের (১৬৫+১০=১৭৫ আসন) সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের (১৩৫+৪০=১৭৫ আসন) সমতা বিধান করা হয়। এই কায়দায় এ খসরা বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের আর পাকিস্তানি শাসক উভয় পক্ষকেই একটি উইন-উইন সমাধান দেখায়।

কিন্তু এটাও সেই সমাধান ছিল না যা ক্ষমতাসীন অভিজাতরা চাইছিলেন। এর ফল হল, কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি খসরাটি অনুমোদন দেয় এবং সংবিধান রচনার জন্য একটি কমিটিকে দায়িত্বও দেওয়া হয়— কিন্তু গভর্নর জেনারেল গুলাম মোহাম্মদ একই মাসে সরকার ভেঙ্গে দিলেন এবং অ্যাসেম্বলিকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করলেন।

এই অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপটি বিচার বিভাগ অনুমোদন দেয় যা দেশে প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থার (Law of Necessity) প্রবর্তন ও প্রয়োগ ঘটায়। এই ঘটনার জেরে দ্বিতীয় কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিকে ফের দাঁড় করাতে গভর্নর জেনারেলের বছরখানেক লেগে যায়।

প্রথমটির মতো না করে এবারকার কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি ‘সমতার নীতি’ অনুসরণ করে; অর্থাৎ প্রথম অ্যাসেম্বলিতে যেখানে ৬৯ আসনের মধ্যে পূর্ব বাংলাকে দেওয়া হয়েছিল ৪৪টি আসন সেখানে দ্বিতীয় কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতেতাদের শুধুমাত্র অর্ধেক আসন দেওয়া হয় (মোট ৮০ আসন থেকে ৪০ আসন)।

নয়া কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করে তা হচ্ছে পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের ৯টি ইউনিটকে একটি প্রদেশে একীভূত করে— এই মিশ্রণটির নাম দেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তান আর এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয় এক-ইউনিট প্রস্তাব।

এটা সমতা কাহিনীকে কিছুটা আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি দেয় যেহেতু দেশ এখন সমান মর্যাদার দু’টি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি ইউনিট— যেখানে আগের দশ ইউনিট পদ্ধতিতে একটি অপর নয়টি ইউনিটের চেয়ে কম মূল্যায়িত ছিল।

এ পর্যায়ে এস্টাবলিশমেন্ট বা ক্ষমতাসীন অভিজাতরা (এটাকে আমরা এখন যেভাবে জানি) একটা বিষয় উচ্চস্বরে, পরিষ্কার করে সবাইকে জানিয়ে দিল যে পূর্ব বাংলার ক্ষেত্রে তারা তাদের অনুসৃত ‘সমতার’ অতিরিক্ত কিছু মেনে নেবে না।

আর এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না যে এই কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালের মার্চে যে সংবিধান পাস করলো তাতে অনুমোদিত হয় ৩০০ সদস্যের একটিমাত্র নির্বাচিত আইনসভা যার অর্ধেক সদস্য হবে পূর্ব পাকিস্তানের আর বাকি অর্ধেক পশ্চিম পাকিস্তানের এবং যার সদস্যরা সবাই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন।

বাঙালিরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস স্থাপন করলো এবং পাকিস্তানে সেই বিশ্বাস হারালো।

প্রথম অ্যাসেম্বলি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাহস করেনি। সবাই জানতো এটা ব্যাপক মতভেদের সৃষ্টি করেছে। আর তাই প্রস্তাবিত ওই পদ্ধতির অধীনে নির্বাচন আত্মঘাতী হয়ে দেখা দেবে। জেনারেল আইয়ুব মনে করলেন, বাছবিচারহীন শক্তিপ্রয়োগ বুঝি লাগসই একটি বিকল্প এবং তা নিয়েই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তিনি ভুল ভেবেছিলেন। তিনি পুরো দেশকে বন্দুকের নলের মুখে দাঁড় করালেন।

এক দশক পরে, যখন শেষতক তিনি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারে বাধ্য হলেন— ক্ষমতায় বসেই জেনারেল ইয়াহিয়া সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি জাতীয় নির্বাচন দিতে সম্মত হলেন যার মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ দেশের সংববিধান রচনা করবে।

তার অনুসৃত লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার-এ (যেহেতু তখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো সংবিধান ছিল না) ৩০০ আসনের জাতীয় পরিষদের ছক কাটা ছিল যাতে বাঙালিদের পুরনো দাবি মোতাবেক পূর্ব বাংলা থেকে ১৬২ সদস্য রাখা হয়। কিন্তু সম্ভবত, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। (প্রথম পর্ব শেষ)

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন ‘দ্য ক্রো ইজ হোয়াইট, বেঙ্গল ইজ পাকিস্তান’- দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন ‘দ্য ক্রো ইজ হোয়াইট, বেঙ্গল ইজ পাকিস্তান’- তৃতীয় পর্ব

[তাহির মেহদি: পাঞ্জাব লোক সুযোগ নামে একটি গবেষণা ও প্রচার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানটি গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে, ই-মেইল: [email protected]]

মোট ৪ পর্বের লেখাটির এই পর্বটি প্রথম প্রকাশ হয় পাকিস্তানের অভিজাত ও প্রভাবশালী মিডিয়া দ্য ডন-এ ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর (এরপর  ধারাবাহিকভাবে বাকি পর্বগুলো প্রকাশ করা হয়)। তখনি লেখকের অনুমতি নিয়ে এর বাংলায় ভাষান্তর করি যা প্রকাশ হয় ১৫ ডিসেম্বর, ২০১২ একটি অনলাইন পোর্টালে। এদিকে, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ দেখা গেল ডন.কম সেই একই লেখা পুনঃপ্রকাশ করেছে। লেখাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং আরও বিশাল পাঠককে এটা পড়ার সুযোগ করে দিতে নিউজওয়ান২৪.কম-এ এটি ফের প্রকাশ করা হলো। মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বাকি পর্বগুলোর বাংলা রূপান্তরও ক্রমশ প্রকাশ করা হবে :আহ্‌সান কবীর, অনুবাদক

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএ/একে

একই ধনের আরও লেখার জন্য ক্লিক করুন যে ‘তুচ্ছ খড়-কুটো’র বোঝা পাকিস্তান নামক ‘উটের’ মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত