ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ১১:০৬, ২০ অক্টোবর ২০১৭

ডায়াবেটিস বাড়ছে তবে প্রতিরোধ যোগ্য রোগও বটে। আবার ডায়াবেটিস হবার আগের অবস্থাও যে আজকাল বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে তাও ঠিক। প্রি-ডায়াবেটিস। আমেরিকাতে ২৫% লোকের রয়েছে প্রি-ডায়াবেটিস। এদেশেও বেশ দেখা যাচ্ছে এ অবস্থা। রক্তের সুগার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তবে ডায়াবেটিস হবার মত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এরকম থাকলে দশ বছরের মধ্যে পুরোপুরি ডায়াবেটিস হয়ে যায়। তবে মাত্র ৪% লোক এ সম্বন্ধে অবহিত। কষ্টের কথা হলো, যারাও অবহিত এদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম লোক শরীরের ওজন বেশি থাকলে কমিয়ে, কম খেয়ে, বেশি ব্যায়াম করে ঝুঁকি কমাবার সত্যিকারের চেষ্টা করেন।

এমন কিছু সুঅভ্যাসও আছে যা চর্চা করলে প্রি-ডায়াবেটিস ঠেকানো যায়, খন্ডানো যায় বড় সমস্যা, জীবনভর ওষুধ ও রক্ত সুগার তদাকরির হাত থেকে বাঁচা যায়। হূদরোগ, আলঝাইমার রোগ, অন্যান্য বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেও বাঁচা যায়। তাই কৌশল শিখলে ক্ষতি কি? খাদ্য, ভিটামিন খান, গুল্ম, এমনকি মনের দৃষ্টিভঙ্গী একে প্রতিহত করার জন্য কম বড় হাতিয়ার নয়।

দেখে নিন ওজন কত শরীরের
আমরা জানি কি যে শরীর থেকে মাত্র ১০ পাউন্ড বাড়তি ওজন ঝরালেও অনেক কমে ঝুঁকি। এমনকি খুব স্থূল লোক শরীরের মাত্র ৫% ওজন হ্রাস করলে, ব্যায়াম না করলেও ৭৫% ঝুঁকি কমাতে পারেন ডায়াবেটিসের। কম ক্যালোরি খেয়ে ঘটানো যায় এমন ম্যাজিক।

সঠিক ক্ষুধা বর্ধক চাই
সবজি, স্যালাত ভালো। শর্করা খাওয়ার আগে পেট ভরে সবুজ শাক সবজি, স্যালাড খেলে রক্তের সুগার থাকবে নিয়তনে। আরিজোনাস্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সমস্যা যাদের তাদের দেখা গেছে প্রচুর শ্বেতসার আহারের পূর্বে ২ টেবিল চামচ ভিনোগার খেয়ে নিলে এদের রক্তের সুগার কমে আসে। ভিনেগারে রয়েছে এসেটিক এসিড, যা শ্বেতসার পরিপাক করার এনযাইমদের নিষ্ক্রিয় করে ধীরে করে দেয় শ্বেতসার পরিপাক। বলেন মুখ্য গবেষক ক্যারল জনসটন। রক্তের সুগারের উপর ভিনোগারের প্রভাবটি ডায়াবেটিসের ওষুধ একারবোস (প্রিকোজ) এর মতই। আহারে ভাত-মাছ খাওয়ার পূর্বে একপ্লেট সবজি ও স্যালাড; তিন টেবিল চামচ ভিনেগার, দুই টেবিল চামচ তিসিতেল, এককোয়া রসুন (ছেচাঁ), এক চামুচের চারের একভাগ মধু, দুই টেবিল চামচ দধি, নুন ও গোলমরিচ ও লেটুসপাতা।

যত পারুন হাটুন
ফিনিস একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব লোক বেশি ব্যায়াম করেছেন-সপ্তাহে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত বা দিনে ৩৫ মিনিট- তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমেছে ৮০%, ওজন না কমানো সত্বেও কেবল হেটে। ব্যায়াম কেন এত হিতকরী? কেন হাঁটা এত স্বাস্থ্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে ব্যায়াম করলে দেহকোষের ইনসুলিন রিসেপটারের সংখ্যা বাড়ে। এতে শরীর হরমোন ইনসুলিনকে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন রক্তের সুগারকে কোষের ভেতর ঢুকতে সাহায্য করে, শরীর গ্লুকোজ দহন করে পায় শক্তি ও পুষ্টি। তাই যানবাহনে কম চলুন, বেশি হাঁটুন।

সঠিক শস্যদানা গ্রহণ করুন
সঠিক শস্যখাদ্য বেছে নিলে স্লিম থাকা সহজ। নিয়ন্ত্রণেও থাকে রক্তের সুগার। গোটাদানাশস্য বেশি খেলে স্তন ক্যান্সারের হার কমে, কমে

টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের। উচ্চ আঁশ শস্য ভালো। যেমন যব, ভুট্টা বেশ ভালো। গম, আটা, ঢেকিছাটা চাল, চিনি যেসব খাবারের লুকানো থাকে তা পরিহার যেমন-ব্রাউন সুগার, কর্ন সিরাপ, ডেক্সট্রোজ, গুড় ও চিনি।

কফি পান ভালো
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ গবেষণায় দেখা গেছে ৩-৪ কপি কফি দিনে কমে ২৯-৫৪% ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। ক্যাফিনে কাজ হয়। চা ও চকোলেটও। ক্যাফিন উজ্জীবিত করে বিপাক। ক্যাফিনের বড় উত্স কফিতে আছে আরও পটাসিয়াম, ম্যাগনোসিয়াম ও এন্টি-অক্সিডেন্ট, গ্লুকোজ শোষণে সহায়ক।

ফাস্টফুড আর নয়
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ১৮-৩০ বছরের ৩০০০ লোকের উপর ১৫ বছর গবেষণা করে পেলেন কদাচিত্ ফাস্টফুড খেলেন তাদের নয়, যারা নিয়মিত ফাস্টফুড খেয়েছেন তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হয় আকাশচুম্বি। অনেক ফাস্টফুডে আছে অস্বাস্থ্যকর ট্রান্সফ্যাট ও শর্করার ঝুঁকি আরও বেশি।

নিয়মিত খাবেন শাক সবজি
মুরগী, খাসীর গোস্ত খেতেই যদি হয় তাহলে কালে ভদ্রে। কদাচিত্। কোনও উত্সবে। বরং নিয়মিত খান রঙ্গিন শাক সবজি ও মাছ।

মসলাযুক্ত খাবার খান
দারুচিনি বেশ প্রভাব ফেলে রক্তের সুগারের উপর। জার্মান গবেষকরা দেখেছেন এক গ্রাম দারুচিনি পাউডারের একটি ক্যাপসুল খেলে রক্তের সুগার কমে ১০%। দারুচিনিতে এমন উপকরণ

আছে যা ইনসুলিন রিসেপটারকে উদ্দীপত্ত করে এমন এনযাইমদের সক্রিয় করে। মিষ্টি এই মসলা রক্তের কোলেস্টেরল ও চর্বিও কমিয়ে থাকে।

শিথিল হোন প্রতি দিন
চাপগ্রস্ত হলে শরীর হয় সক্রিয়। শরীর উত্তেজিত। হৃদস্পন্দন হয় দ্রুত। শ্বাস হয় দ্রুত। পেটে মনে হয় প্রজাপতি উঠছে। রক্তের সুগারও উঠে শীর্ষে। চাপগ্রস্ত হলে, শরীর-এ থাকে ‘যুদ্ধ কর নয়ত পালাও’ এমন। এজন্য রক্তে সুগার বাড়ে মোকাবেলার জন্য।

বলেন, মাইন্ড-বডি ডায়াবেটিস রিভলোটেশন গ্রন্থের লেখক রিচার্ড সারউইট। দেহকোষে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলে রক্ত জমে উঠে রক্ত স্রোতে কোথায় যাবে। ক্রনিক উচুতে থাকে সে সুগার। সুখবর হলো, সামান্য শিথিললায়ন ব্যায়াম ও অন্যান্য স্ট্রেস মোকাবেলার কৌশল রক্ত সুগারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। যেমন-

১. দিন শুরু হোক যোগ ব্যায়াম, ধ্যান দিয়ে, হাঁটা দিয়ে।

২. ফোনে উত্তর দেয়ার আগে তিনটি গভীর, ধীর শ্বাস নিন। গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগে, বাচ্চাদের লাঞ্চ দেবার আগে, কোন কাজ শুরুর আগে।

৩. বন্ধের দিন পরিবারের সবার সাথে বেড়াতে যান। মজা করুন।

রাতে যেন হয় সুনিদ্রা
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুম রাতে ৬ ঘন্টার কম হয় নিয়মিত এদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হয় দ্বিগুণ যারা ৮ ঘন্টা ঘুমান তাদের তুলনায়। খুব কম ঘুমালে বা খুব বেশি ঘুমালে (স্লিপ এপ্লিয়ার জন্য) স্নায়ুতন্ত্র থাকে বড় সজাগ, এতে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রক হরমোন ব্যহত হয়। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যাদের ঘুম ৫ ঘন্টার কম এদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হয় দ্বিগুণ। সুনিদ্রার জন্য বিকেল থেকে চা-কফি, চকলেট গ্রহণ করা উচিত নয়। অফিসে কাজ রেখে আসবেন, ঘরে কাজ নিয়ে আসবেন না। লেটনাইট টিভি দেখবেন না। মোবাইল অফ রেখে ঘুমাবেন।

সঙ্গীর সাথে থাকুন, থাকুন বন্ধু-বান্ধবসহ
নিঃসঙ্গ থাকেন যে সব মহিলা, এদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আড়াই গুণ বেশি পরিবার পরিজন নিয়ে থাকা মহিলাদের তুলনায়। গবেষকরা এমনই অভিমত: প্রকাশ করেছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। তাই সত্সঙ্গে থাকুন সব সময়।

রক্তের পরীক্ষা করণ
রক্তের সুগার। সহজ পরীক্ষা। প্রি-ডায়াবেটিস যদি রক্তের সুগার ১০০-১২৫ এর মধ্যে থাকে। ১০ বছরে হতে পারে পূর্ণ ডায়াবেটিস। পথ্য জীবন ধারার পরিবর্তন, ওজন কমানো, লাইফস্টাইল পরিবর্তনসহ নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতে হবে।

লেখক : পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএ

লাইফস্টাইল বিভাগের সর্বাধিক পঠিত