ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ট্রলারে মালয়েশিয়া, অতঃপর জেল: ১২০ বাংলাদেশি ফিরছেন ডিসেম্বরে

প্রবাস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩২, ১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৩:৪০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

দেশে ফেরার অপেক্ষায় স্বপ্ন হারানোদের কয়েকজন                       -ফাইল ফটো

দেশে ফেরার অপেক্ষায় স্বপ্ন হারানোদের কয়েকজন -ফাইল ফটো

দীর্ঘ এক বছর মালয়েশিয়ার বুকিত জিলিল জেলখানায় দণ্ডভোগ শেষে দেশে ফিরছেন ১২০ জন বাংলাদেশি। গত বছরের শেষ দিকে দালালদের প্রলোভনে পড়ে অবৈধ ও বিপজ্জনকভাবে ট্রলারে চড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যান এই বাংলাদেশিরা।

কিন্তু পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন তাদের অধরাই থেকে গেছে। দুর্গম সাগর পথেই ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর অবর্ণনীয় অত্যাচারের ধারবাহিকতায় ওই যুবকরা বুঝতে পেরেছিলেন তারা প্রতাড়িত হয়েছেন। তাদের সামনে তখন ফেরার পথও নেই।

এরপর সাগরপাড়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে তাদের রাখা হয় কিছুদিন। পরে মালয়েশিয়ায় নেওয়ার পর ধরা পড়তে হয় পুলিশের হাতে। এরপর বুকিত জিলিল কারাগারে একবছর বন্দিজীবন কাটিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় আগামী ৭, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর আকাশ পথে দেশে পাঠানো হচ্ছে তাদের।

দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিবের পিএ শফিকুল ইসলাম জানান, ওই বাংলাদেশিরা অবৈধ পথে মালয়েশিয়া প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের হাতে পড়ে। তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি আরও জানান, মানবপাচারের একটি মামলার সাক্ষী হিসেবে তাদের বন্দিশিবিরে আটক রাখা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ এক বছরেও ওই মামলার নিষ্পত্তি না হলে সম্প্রতি দেশটির আদালত ওই ১২০ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠাতে আদেশ জারি করে।
আদেশের পরপরই ১২ নভেম্বর মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশে দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) শাহিদা সুলতানা বুকিত জলিল ক্যাম্পে গিয়ে ওই ১২০ জনের তালিকা সংগ্রহ করেন। এরপর গত ২৯ নভেম্বর ট্রাভেল পাস ইস্যু করে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।

আদম বেপারীদের ধোঁকায় পড়ে ভিটেমাটি-সহায়সম্বল বিক্রি করে তুলনামূলক কম খরচে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর জোয়ার বইছিল কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে কিছু কিছু এলাকায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারে হাসি ফোটানো তো দূরে থাক, অনেকেই সাগরে ট্রলার ডুবিতে বা আদম বেপারীদের ক্যাডারদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন। যারা মালেয়েশিয়ার মাটিতে পৌ৭ছাতে পেরেছেন তাদের বেশিরভাগ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে ঘানি টেনেছেন।

মালয়েশীয় ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্র মতে, দেশটির সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, লাঙ্গ, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাপ উম্বু, পেকা নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে আটক বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। গত মঙ্গলবার স্থানীয় গণমাধ্যম সেখানকার উপকূলীয় এলাকায় নতুন করে ৭ হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশিকে আটকের খবর জানায়।
ইমিগ্রেশন পুলিশের উপসহকারী পরিচালক জোসামি মাস্তান বলেন, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব শাহিদা সুলতানা জানান, দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে সেখানে বন্দি বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং শনাক্ত করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবির থেকে ৬ হাজার ৭৯৭ জন অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়েছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

প্রবাসী দুনিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত