ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

গুলবার্গ গণহত্যা: গুরু পাপে লঘুদণ্ড!

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১২, ১৮ জুন ২০১৬   আপডেট: ১৬:০৭, ২১ জুন ২০১৬

রায়ে প্রতিক্রিয়া জানান জাকিয়া জাফরি, দণ্ডিতদের একজনের বোন ও তিস্তা সেতালবাদ

রায়ে প্রতিক্রিয়া জানান জাকিয়া জাফরি, দণ্ডিতদের একজনের বোন ও তিস্তা সেতালবাদ

গুজরাটের মুসলিম আবাসিক এলাকা গুলবার্গ হাউজিংয়ে হামলা চালিয়ে ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগে। শুক্রবার আহমেদাবাদের বিশেষ আদালতের রায় ওই গণহত্যায় দোষী ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।

রায় ঘোষণাকালে বর্বর ওই ঘটনাটিকে ‘সভ্য সমাজের ইতিহাসে অন্ধকারতম দিন’ বলে উল্লেখ করেছে আদালত।

রায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি অপর এক দোষীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর ১২ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের নিহত সাবেক এমপি এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। এ ধরনের রায় বিভৎসতম দাঙ্গার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে কি না তা সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন একজন।

২০০২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ভারতের গুজরাটে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু-মুসলিম দুইপক্ষের ওই দাঙ্গায় হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। কয়েকদিন চলা দাঙ্গায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘটা গুলবার্গ হত্যাকাণ্ড ছিল ভয়াবহতম। গুজরাট দাঙ্গার এটি ছিল একক ঘটনা যেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়।

বেপরোয়া উন্মত্ত মৌলবাদী হিন্দুদের ওই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মুসলিম রাজনীতিক কংগ্রেস এমপি এহসান জাফরি। তার বিধবা স্ত্রী জাকিয়া জাফরি শুক্রবারের রায়ে আসামিদের মৃতুদণ্ড না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সেখানেই ফিরে গেলাম।”

দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডের আগেরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিন গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেস ট্রেনে লাগা আগুনে ৬০ জন হিন্দু করসেবক (তীর্থযাত্রী) পুড়ে মারা যান। এর জের ধরে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।

অসন্তোষ
এদিকে, গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডে নিহত নারী-শিশুসহ সবাই ‘নিরপরাধ মানুষ’ ছিল বলে আদালতে উল্লেখ করেন আইনজীবীরা। তারা হত্যাযজ্ঞে অভিযুক্ত ২৪ জনেরই মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন।

গত ২ জুন অভিযুক্তদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৪ জন দোষী সাব্যস্ত হয় আদালতে। বাকি ৩৬ জনকে প্রমাণের অভাবে খালাস দেওয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

জাকিয়া জাফরিসহ নিহত-ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজনরা ছাড়াও ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত দোষীদের লঘু শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খ্যাতিমান মানবাধিকারকর্মী তিস্তা সেতালবাদও।

তিস্তা অপরাধীদের লঘু সাজায় হতাশ হলেও রায়কে স্বাগত জানান। তিনি এ ধরনের গুরুপাপে লঘু সাজার বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিশোধমূলক রায় চাই না তবে সংস্কারসাধনকারী রায় চাই। ক্ষতিপূরণ বিষয়ে জানি না বিচারক কী বলেছেন।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জাকিয়া বলেন, এত লোক মারা যাওয়ার পর আদালত এইটুকু মাত্র করতে পারলো! মাত্র ১২ জন দোষী। আমি সন্তুষ্ট না। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে আলাচনা করবো। এটা বিচার নয়।

এই রায়কে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন বলে জানান তিনি।

অপরদিকে দণ্ডিতদের একজনের বোন জানান, তার ভাই নিরপরাধ। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
খালাস পাওয়াদের মধ্যে আছেন বিজেপি নেতা বিপিন পাটেল। গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল আদালতে।

আক্রান্ত জাফরি ফোন করেছিলেন মোদিকেও
ওই নৃশংস হামলায় এহসান জাফরিকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে করসেবকরা। আক্রান্ত অবস্থায় ভীত-সন্ত্রস্ত কণ্ঠে কংগ্রেস এমপি জাফরি সাবেক সাংসদ পুলিশ ও জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের অনেককে ফোন করেন সাহায্যের জন্য। তবে কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্যে। জাকিয়া জাফরি আদালতকে বলেছেন, তার স্বামী এহসান জাফরি বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও তখনকার মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও সাহায্য চেয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, গুলবার্গ হত্যাকাণ্ড গুজরাট দাঙ্গার ১০টি প্রধান ঘটনার অন্যতম। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ২০০৮ সালে এই মামলাগুলোর পুঃতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশেষ তদন্ত দলকে (এসআইটি)। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত