ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

হাইকোর্টের নির্দেশ

কর্নেল তারেকসহ ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার কর

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১১ মে ২০১৪   আপডেট: ১২:০৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

[লে. কর্নেল তারেক]

[লে. কর্নেল তারেক]

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর অবসরে পাঠানো র‌্যাবের সেই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দণ্ডবিধি বা বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।

আজ রোববার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
সেই তিন কর্মকর্তা হলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানা। তিন কর্মকর্তার মধ্যে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন এবং নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার সেনা দপ্তর ও নৌবাহিনী সদর দপ্তর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অবসরের পর তাঁরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে জানা গেছে।
সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে নিহত বা খুনের শিকার আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের পক্ষে নির্বাহী সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রিট আবেদন করেন।
রিটে সাতজনকে অপহরণের পর খুনের ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।
শুনানিকালে আদালত রিট আবেদনটি সুস্পষ্ট করে দিতে বলেন। তাত্ক্ষণিক আবেদনকারীপক্ষ তা সংশোধন করে দেয়।
আদালত শুনানি নিয়ে ওই আদেশের পাশাপাশি রুলও দেন। রুলে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিদ্যমান আইন সংশোধন কেন হালনাগাদ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আইনের দুর্বলতা সংশোধন, দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, ইতিপূর্বে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন, সেই বেঞ্চেই একসঙ্গে বিষয়টির শুনানি হবে।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ভেসে ওঠে সাতজনের মরদেহ। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে নজরুলের পরিবার।
গত রোববার নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।
এ অভিযোগ সম্পর্কে টেলিফোনে জানতে চাইলে তারেক সাঈদ রোববার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সব বাহিনীর লোক মিলে একসঙ্গে ঘুষ নেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তা ছাড়া ছয় কোটি টাকা অনেক টাকা। এতগুলো টাকা নিতে পিকআপ লাগার কথা। প্রশ্ন হলো, এত টাকা নিয়ে আমি কী করলাম। সে টাকা তো আমার কাছে থাকতে হবে। আমার মনে হয়, কাউকে বাঁচানোর জন্য এসব কথা বলা হচ্ছে। এসব কথাবার্তা তদন্তকে জটিল করে তুলবে।’
ছয় কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করতে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদ।

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত