ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

ওবামার ‘ছেলেমানুষি আচরণের’ জবাবে পুতিনের ‘ওস্তাদি চাল’

বটতলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৩:০৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

ওবামা ও পুতিন সম্পর্ক উত্তেজনাকর অবস্থা             -কোলাজ চিত্র

ওবামা ও পুতিন সম্পর্ক উত্তেজনাকর অবস্থা -কোলাজ চিত্র

ওবামার কাণ্ডটি ছিল রাশিয়াকে উত্যক্ত করে তাকে দিয়ে বেচাল কিছু করানো- কিন্তু সেই টোপ গিলবে না রাশিয়া। ক্রেমলিন ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে এমন কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর তাই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ৩৫ কূটনীতিককে বহিষ্কার করলেও এর জবাবে ‘ইটের বদলে পাটকেল’ ধারায় মার্কিন কোনো কূটনীতিককে রুশরা বহিষ্কার করছে না।

পুতিনের এ পদক্ষেপকে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘খুবই বুদ্ধিদীপ্ত কাজ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারনাকালের কথা। ওই সময়ে ট্রাম্পকে মার্কিন প্রেডিডেন্ট হওয়ার অনুপযুক্ত বলে রায় দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। আর জবাবে ট্রাম্প ওবামাকে অভিহিত করেছিলেন ‘সবচেয়ে অযোগ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে।

এদিকে, শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার আমাদের আছে, থাকবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে এখনই কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আমরা দায়িত্বজ্ঞানহীন কূটনীতির আবহে নেমে যাওয়া থেকে বিরত থাকব। তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনীতিককে বহিষ্কার করবো না।

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির পরাজয়ের পেছনে রুশ হ্যাকারদের দায়ী করে আসছে ওবামা প্রশাসন। সিআইএসহ মার্কিন সব গোয়েন্দা সংস্থাই একই অভিযোগে প্রতিবেদন দিয়েছে।

ওয়াশিংটনের অভিযোগ, পুতিনের নির্দেশে ডেমোক্রেট প্রার্থীর ই-মেইল হ্যাক করা ও তা প্রকাশের মাধ্যমে রুশ গোয়েন্দারা হিলারির জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্ট দুই দেশের অস্থির সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৩৫ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।

জবাবে রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বৃহস্পতিবারই এর বিপরীতে ৩৫ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার এবং নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রস্তাব দেন পুতিনকে।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুশ নেতা সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।

রাশিয়া ওবামা প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপকে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষুণ্নের আরেকটি চেষ্টা হিসেবেই দেখছে এবং ওবামা প্রশাসন তার শেষ সময় এভাবে শেষ করছে বলে হতাশাও প্রকাশ করেছে।

পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতারোহনের পর ওবামার নেওয়া পদক্ষেপ উল্টে দেবেন বলেও মনে করছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা।
রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিনের দেওয়া বিবৃতিতে পুতিন আরও বলেন, আমরা সেইসব পরিবারকে তাদের নববর্ষ উদযাপন থেকে বঞ্চিত করতে চাই না যারা (রাশিয়ায়) তা উদযাপন করে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এছাড়াও আমি রাশিয়ায় অনুমোদিতভাবে বসবাসরত সকল মার্কিন কূটনীতিকদের ছেলে-মেয়েদের ক্রেমলিনে স্বাগত জানাই বড়দিন ও নববর্ষের উসব মুখরতায় যোগ দিতে।

এছাড়া রাশিয়ার প্রতি বিদায়ী ওবামা প্রশাসনের আচরণে হতাশা প্রকাশ করলেও পুতিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার পরিবারকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলেননি।

এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়নে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উত্থান-পতন পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছেন- ৩৫ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারে বিদায়ী মার্কিন নেতার ‘ছেলেমানুষী আচরণের’ জবাবে বলা যায় রুশ নেতা দিয়েছেন ‘ওস্তাদি চাল’- কোনো মার্কিন কূটনীতিককে বিদায় না করার ঘোষণায়।

দুই দেশের প্রেসিডেন্টের এই দুই ধারার আচরণ রুশ-মার্কিন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে বলে ধরে নেওয়া যায়। এতে অবশ্যই ইতিবাচক অবস্থানে থাকবেন পুতিন, যেটা আগামী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা পুতিন-বন্দনায় ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে।

অস্বস্বস্তিতে ওবামা প্রশাসন!
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ওবামা রুশ কূটনৈতিকদের বহিষ্কারের ঘোষনা দেওয়ার পরপর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র জানিছিলেন, মার্কিন পদক্ষেপের জবাবে ক্রেমলিন যে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়বে। অন্যদের ধারণার বাইরে পুতিনের এই ঘোষণায় বলা যায় বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে অবশ্যই পড়ে গেছে ওয়াশিংটন।
নিউজওয়ান২৪.কম/একে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত