ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

এলেমদার প্রতারক: মক্কেলদের চড়াতেন প্লেনে রাখতেন রেডিসনে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৯ মে ২০১৬   আপডেট: ২০:২২, ২৮ মে ২০১৬

ঢাকা: রাজধানীর জিগাতলা এলাকা থেকে এক ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটসহ দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরা দুজন সম্পর্কে পিতাপুত্র বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সোমবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতর থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, গ্রেফতার হাফিজুর রহমান খান(৭০) নিজেকে ‘কাস্টমস কশিনার’ পরিচয় দিয়ে লোকজনকে প্রতারণা করে আসছিল। গ্রেফতার অপর দুর্বৃত্ত বিপ্লব খান তার পুত্র বলে জানা গেছে।

র‌্যাব-২ এর উপঅধিনায়ক মেজর শোয়েব নিউজওয়ান২৪.কমকে জানান, গ্রেফতার হওয়া হাফিজুর রহমান খান কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবত লোকজনকে প্রতারণা করে আসছিলেন। এই কাজে নিজের চার পুত্রকন্যা তার সহযোগী ছিল। খান ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তারা শুধুমাত্র সাম্প্রতিক সময়েই আট কোটি টাকার প্রতারণা করে।

মেজর শোয়েব আরও জানান, বয়োবৃদ্ধ হাফিজ নিজেকে প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও পরিচয় দেন। তিনি লোকজনকে পোর্টে কাস্টমস জটিলতায় আটকে থাকা বিলাসবহুল গাড়িসহ আমদানি নিষিদ্ধ মালামাল ছাড়িয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তিনি তার ‘মক্কেলদের’ প্লেনে করে আনা নেওয়া করতেন, রাখতেন রেডিসনের মতো হোটেলে।

তিনি জানান, হাফিজুর রহমান খুব ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব অভিযানে নামে। অভিযানের আগে অনুসন্ধানে দেখা যায়- সাম্প্রতিক সময়েই প্রতারণা করে তিনি ও তার চার পুত্রকন্যা আটকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এদের সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চক্রের বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।

গভীর জলের মাছ প্রতারক হাফিজ

থানা-জিগাতলা বাজার, ডিএমপি, ঢাকাদের বর্তমান ঠিকানা- ধানমন্ডি জিগাতলা বাসা নং-এ-৬, জিগাতলা বাজার, থানা-জিগাতলা বাজার, ডিএমপি, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ০১টি নোহা মাইক্রো এবং ০১টি হিউম্যান হলার গাড়ি উদ্ধার কর

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাফিজুর রহমান খান ঢাকা শহরের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অফিস ও বাসস্থান ভাড়া নিয়ে অভিজাত ধারায় চলাফেরা করতো। নিজেকে কখনও মুক্তিযোদ্ধা, কখনো কাস্টম কমিশনার আবার কখনও অন্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো। মক্কেলদের কাছে নিজের জৌলুস তুলে ধরার জন্য দরকার মতো হাফিজ তার সঙ্গে ভাড়া করা সশস্ত্র দেহরক্ষী বা গানম্যানও রাখতো।

জানা গেছে, ক্লায়েন্টদের অনেককে বন্দরে আটকে থাকা গাড়ি ছাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর হতে নিলামের গাড়ি স্বল্প মূল্যে কিনে দেওয়ার লোভও দেখাতো সে। এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এই প্রতারণার কাজে তার চার সন্তানসহ পুরো পরিবার জড়িত রয়েছে। মূলত তার এই প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত আবাসিক এলাকা যেমন উত্তরা, গুলশান, বারিধারা, ডিওএইচএস এবং সর্বশেষ ধানমন্ডি এলাকাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়।

হাফিজ তার ব্যবহৃত ফ্লাটের পর্দা, আসবাবপত্র, গাড়ি সব কিছুই প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। দিনে দিনে প্রতারক হাফিজ হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য, একের পর এক ক্লায়েন্টকে ঠকিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করতো। তার এ প্রতারণা আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সে বিভিন্ন গাড়ি ক্রেতাকে চট্টগ্রাম বন্দর বা মংলা বন্দরের ভেতরে নিয়ে বিভিন্ন গাড়ি দেখাতো এবং ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে রাখতো এবং তাদের গমনাগমনের জন্য উড়োজাহাজের টিকিট প্রদান করতো।

গ্রেফতার প্রতারক হাফিজুর রহমান খান তিনটি বিয়ে করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, সে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তার সন্তানসহ পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে এবং জায়গা জমি ক্রয় করেছে।      

গ্রেফতার প্রতারক চক্রটি বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ‘খান ইন্টারন্যাশনাল’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। এই জালিয়াত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে আছে তার বড় ছেলে মিথুন খান এবং ডিরেক্টর পদে আছে অপর ছেলে তামিম খান (শাকিল)।  এরা দুজনই উভয় পলাতক। সবসময় তারা দামী অফিস বাসা এবং গাড়ি ব্যবহার করতো। ক্লায়েন্টদেরকে অভিজাত হোটেলে নিয়ে ‘ব্যবসায়িক মিটিং’ করতো এবং তাদের নানা উপলক্ষে উপহার দিয়ে প্রতারনার ফাঁদে শক্তভাবে জড়িয়ে নিতো।

হাফিজের কয়েকজন শিকার
র‌্যাবের তদন্তে হাফিজের সুচতুর প্রতারণার জালে আটকে পড়া কয়েকজন ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে। হাফিজ তার এসব শিকারদের কাছ থেকে কোটি টাকা থেকে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হজম করে ফেলেছে।

এমন ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন উত্তরা এলাকার বিমানবন্দরের ব্যবসায়ী মতিউর রহমান। তাাকে একটি প্রাডো গাড়ি স্বল্প মূল্যে কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২৩ লকাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ৈ নেয় হাফিজুর রহমান খান। এছাড়া খান মোহাম্মদ তাহমিদ রহমান নামের টাইলস ব্যবসায়ীকে দুইটি এলিয়েন গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাবদ এগার লাখ টাকা, এল জি শো-রুম হতে মনিরুজ্জামানের নিকট হতে বাকিতে সাড়ে তিন লাখ টাকার  ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী এবং একটি প্রাইভেটকার কিনে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে চার লাখ টাকা,  বনানী এলাকার মিলন ব্যাপারীর কাছ থেকে তের লাখ টাকা হেজটেক ক্যাফে অ্যান্ড লাইন্সের মালিক দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে যৌথ ব্যবসা এবং একাধিক প্রাডো ও প্রাইভেট কার কিনে দেওয়ার নাম করে  এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা,  মেহেদী হাসানের অ্যাগ্রো ফার্মের জন্য মিনিট্রাক/হিউমেন হলার কিনে দেওয়ার নাম করে ১ কোটি ২৫লাখ টাকা,  সৈয়দ মো. সামসুল কাওনাইন কুতুবেরর কাছ থেকে আটাশি লাখ টাকা, ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিনের কাছ থেক নয় লাখ টাকা,  ফরিদ আহমেদের ৩০ লাখ টাকা, সেলিম আহম্মেদেরর পাচঁ লাখ, কবির আহমেদের আট লাখ, সামিমের পাঁচ লাখ,  তানভীরের তিন লাখ চল্লিশ হাজার, আবুল খায়েরের দুই লাখ ষাট হাজার, গুলশানের মোস্তাফিজুর রহমাননের পনের লাখ, হাসান আলীর তিন লাখ, বারিধারা এলাকার ফয়সাল বিন নবীর ছয় লাখ, জিগাতলার জাহিদ হাওলাদারের দুই লাখ, মাকসুদা আক্তারের সাড়ে চার লাখ, হাজারীবাগের  ড্রাইভার জাহিদের দুই লাখ, রাজারবাগ এলাকার ডা. শামীম আনোয়ারের আট লাখ, মিরপুরের ওয়ারছি উদ্দিনের ২৪ লাখ ৩০ হাজার, কক্সবাজারের ডা. মাহবুবুর রহমানের দশ লাখ টাকা (প্রায় ছয় কোটি) টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে সে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এনজে

আরও পড়ুন
অপরাধ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত