ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

আয় দিল মুশকিল: হিন্দু মৌলবাদী এমএনএসের দাবির বিপক্ষে ভারতীয় আর্মি

সার্ক অঞ্চল ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৬  

যাকে নিয়ে এত কাণ্ড- সেই পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান (সহশির্পীর সঙ্গে)  -ফাইল ফটো

যাকে নিয়ে এত কাণ্ড- সেই পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান (সহশির্পীর সঙ্গে) -ফাইল ফটো

বলিউডের খ্যাতিমান নির্মাতা করণ জোহরের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ নিয়ে জটিলতার গেঁড়ো একের পর এক বেড়েই চলেছে যেন। সর্বশেষ ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ভিক্ষার কোনো পয়সা নেয় না।

ছবিটিতে পাকিস্তানি শিল্পী থাকায় এর রিলিজে বাধ সাধে হিন্দু মৌলবাদী গ্রুপ। পাকিস্তানি শিল্পী ফাওয়াদ খান ছবিটিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মূল চরিত্রগুলোতে আছেন ঐশ্বর্য  রাই, রনবির কাপুর, আনুস্কা শর্মা প্রমুখ। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানও এতে একটি অতিথি চরিত্রে আছেন।

শিবসেনার সাবেক এক নেতা ছবিটির মুক্তিতে বাধা না দেওয়ার শর্ত হিসেবে বলেছিলেন- পাকিস্তানি শিল্পী রাখার জন্য পাঁচ কোটি রুপি সেনাকল্যাণ ফান্ডে জমা করতে হবে নির্মাতাদের। প্রথমে বলা হয়েছিল ছবিটি থেকে পাকিস্তানি শিল্পী বাদ দিতে হবে। কিন্তু ছবি তো তৈরি হয়ে গেছে- এখন সেটা করতে গেলে পুরো বিষয়টিই কেঁচে গণ্ডুষ করতে হয়- যা এক কথায় বেশ কঠিন।

পরলোকগত শিবসেনা বস বাল ঠাকরের ভাতিজা এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে এ অবস্থায় পাকিস্তানি শিল্পী নেওয়ার ‘কাফফারা’ হিসেবে তিনটি শর্ত দেন করন জোহরকে। এর প্রধান শর্তটি হচ্ছে- পাঁচ কোটি রুপি ‘আর্মি ওয়েল ফেয়ার ফান্ডে’ দেওয়ার দাবি তোলেন।

তবে এতে দ্বিমত পোষন করে ভারতীয় সেনা। মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মোতাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন- সেনাবাহিনী অরাজনৈতিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য একে টানা-হেঁচড়া না করাই শ্রেয়ঃ। সাবেক নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার লে. জেনারেল বিএস জায়সবাল বলেন, আর্মি ভিক্ষায় দেওয়া তহবিল গ্রহণ করে না। যদি চলচ্চিত্র প্রযোজকরা কিছু দিতে চান তবে তা অন্যান্য ভারতীয়রা যেভাবে দেন- সেভাবেই দিতে হবে- কিন্তু এই কায়দায় নয়।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ঘটনা যদি এতই সিরিয়াস হয় তবে সরকারকেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা করতে হবে।

প্রডিউসার্স গিল্ডের সভাপতি মুকেশ ভাট বলেন, মুখ্যমন্ত্রী (সিএম) ফারনবিজের ঘরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট অংকের অর্থের ব্যাপারে কথা হয়নি। তবে করন জোহর সিএমকে বলেছেন, আমার ছবি চলুক না চলুক আমি টাকা দিয়ে দিয়েছি আগেই।

ছবিটি যাতে এবারে দিওয়ালীতে (দীপাবলী) নির্বিঘ্নে মুক্তি পেতে পারে সে লক্ষ্যে প্রযোজকদের একটি দল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রতিনিধি দলের নেতা মুকেম ভাট জানান, একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সুরক্ষিত থাকার অধিকার তার আছে- সরকারের কাছে সেই প্রত্যাশা তিনি করতেই পারেন। আসন্ন দিওয়ালিতে সুস্থ বিনোদনের ছবি যদি কেউ দেখতে চান, রাষ্ট্রের কর্তব্য তাকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং যারা বিনা কারণে এই ইস্যুতে হিংসা তৈরি করছে তাদের প্রতিহত করা।

তবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ফারানবিজ এক নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, কে পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে সে বিষয়ে তিনি জানেন না।

রোববার ভাস্কর.কম জানায়, কারগিল যুদ্ধে ভারতীয় পক্ষের ‘হিরো’ ব্রিগেডিয়ার (অব.) কৌশল ঠাকুর বলেন, জাতীয় আবেগের শোষণ করা উচিৎ না। যদি কিছু ভুল থাকে তবে তা ভুল-ই। সেই ভুলকে পুঁজি করে চাপ সৃষ্টি করে পাঁচ কোটি টাকা ডোনেশনের বিষয়টি সহিহ কীভাবে বলা যায়! রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সেনাবাহিনীর অপব্যবহার অনুচিৎ।

ভারতীয় সেনা সদর থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো রিলিফ ফান্ডে যে কেউ সহায়তা করতে পারে- কিন্তু এটা হতে হবে স্বেচ্ছায়। এজন্য কারও ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন না আপনি। আর্মি এ ধরনের সহায়তা গ্রহণ করতে পছন্দ করবে না।

প্রসঙ্গত, `অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল` ছবিটিতে পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান একটি ছোট ভূমিকায় অবিনয় করেছেন। এটাকে ইস্যু করে মহারাষ্ট্রের কট্টর হিন্দু এমএনএস হুমকি দিয়েছে- ছবিটি যে সব হলে চলবে সেখানে তারা হামলা চালাবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে, ছবির পরিচালক করন জোহর দেশবাসীর কাছে এক ভিডিও বার্তায় ছবিটির নিরাপদ মুক্তিতে সমর্থন চেয়েছেন- তবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের পরও ছবিটির মুক্তি নিয়ে সংশয় কাটছে না। কারণ এমএনএস, শিবসেনা, আরএসএস জাতীয় মৌলবাদী দলগুলো সরকারকে অনেক ক্ষেত্রেই থোরাই কেয়ার করে।

ভিডিওবার্তায় করন বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে যখন আমি ছবিটা বানাই তখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। আমাদের সরকার তখন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টায় রত ছিল, আমিও সেই প্রচেষ্টাকে সম্মান করেছিলাম। আজ দেশবাসীর যে অনুভূতি সেটাকেও আমি মর্যাদা দিই- এবং পরিস্থিতি এরকম হলে আমিও কিন্তু পাশের দেশের প্রতিভাদের কখনও কাজে লাগাতাম না।

প্রসঙ্গত, এমএনএসসহ অন্যদের হুমকির মুখে মুম্বাই তথা মহারাষ্ট্রের বেশির ভাগ সিনেমা হল মালিক নিজে থেকেই ছবিটে দেখানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। মাল্টিপ্লেক্সগুলোও এমএনএসের হুমকির মুখে আছে। এ অবস্থায় ছবির ভাগ্য নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন করন।

গত সেপ্টেম্বরে ভারত শাসিত কাশ্মিরের উরি সেনাছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ সৈনিক হত্যার ঘটনায় ভারতজুড়ে চরম পাকিস্তান বিরোধী মনোভাবের জোয়ার উঠে। প্রতিবেশি দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এমনিতেই দা-কুমড়ো থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়। এখন সেই চিরকেলে অবিশ্বাস আর রেষারেষির আগুনে যেন ঘৃতাহুতি দিয়েছে উরির ঘটনা। পাকিস্তান যদিও বলছে তারা এর সঙ্গে জড়িত নয় কিন্তু ভারত দাবি করছে, পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায়ই ওই হামলা হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরে কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে ৯ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যার কথা জানায় জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় ৮ সেনাকে হত্যা ও একজনকে আটকের কথা জানায়।

আকষ্মিকভাবে উরির ঘটনার বলি দুইদেশের নিরীহ-নিপাট অনেকেই হয়েছে যাদের পরষ্পরের সঙ্গে ব্যবসা বা অন্য কোনো ধরনের লেনদেন ছিল। এর মধ্যে ফ্যাঁসাদে পড়েছেন উভয় দেশের শিল্পীমহলও। ফেঁসেছেন নামি নির্মাতা করন জোহরও। ভারতে শোর উঠেছে মুম্বাইয়া ফিল্মে পাকিস্তানি কোনো শিল্পী অভিনয় করতে পারবে না। এই মত দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার পেছনে জ্বালানির কাজ করছে অবশ্য চরম মৌলবাদী গোষ্ঠী।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত